প্রগতি সরণি, বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করেছেন কোটা আন্দোলনকারীরা
রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে প্রগতি সরণির একপাশ অবরোধ করে রেখেছে একদল কোটা আন্দোলনকারী।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকা আন্দোলনকারীরা নতুন বাজারের দিকে যান চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শুভ ঘোষ বলেন, "মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথের সামনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। ফলে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।"
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউলাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেড়িবাধ সড়ক (গাবতলী ও মোহাম্মদপুরের মধ্যে) অবরোধ করেন।
এতে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "আমরা তাদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বোঝানোর চেষ্টা করছি।"
অন্যদিকে গুলশান-তেজগাও রোড অবরোধ করে আন্দোলন করছেন আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং কোটা বাতিলের দাবিতে শ্লোগান দিচ্ছেন তারা।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি), এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) সহ অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা রাজধানীর কুড়িলে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হয়েছেন।
সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় আজ সকালে এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
আন্দোলনের সমন্বয়কারী, চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের লোকজন তাদের আহত বন্ধুদের নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে হামলা চালায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, গতকাল বিকেল থেকে অন্তত ২৫০ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ডক্টর মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, ছাত্রাবাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় তিনি সাহায্যের জন্য ডাকলেও কোনো সাড়া পাননি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর একই ধরনের হামলার খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার শামসুর রহমান।
অন্তত দুই ফটোসাংবাদিক, ডেইলি স্টারের সিনিয়র ফটোগ্রাফার প্রবীর দাস এবং দৈনিক প্রথম আলোর স্টাফ ফটোগ্রাফার দীপু মালাকারও ছাত্রলীগের কথিত সদস্যদের হামলায় আহত হয়েছেন।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে কোটা আন্দোলনকারীদের সমাবেশে যোগ দিতে অস্বীকার করা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
ছাত্রলীগ নেতাদের মতে, অহিংস আন্দোলনের দাবি করে আসা আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে সশস্ত্র অবস্থানে ছিল।
ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্র শিবির আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করেছে এবং ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতির মধ্যেই দিনভর হামলা চলতে থাকে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন কোটা আন্দোলনকারীরা।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে অপমানজনক দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগের রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করার পর গতকাল দুপুর ১২টায় নতুন করে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি এলাকায় ছাত্রলীগের সদস্যরাও তাদের পূর্বঘোষিত সমাবেশে জড়ো হন।
এর আগে রোববার (১৪ জুলাই) রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ঘোষণা দেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননার জন্য ছাত্রলীগ রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ছাত্রলীগ গতকাল রাতে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দৃঢ়তার জবাব দিতে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, একটি মহল কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার চেষ্টা করছে।
আজ বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "তরুণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে দেয়া হবে না।"