সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও চড়া চালের বাজার
সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ডিম, সবজি ও ব্রয়ালার মুরগির দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দামে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে চাল ব্যবসায়ীরা সরবরাহ পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে চালের দাম যে বস্তা প্রতি (৫০ কেজির বস্তা) ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন, তা এখনও কমাননি।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে বলে জানান ভোক্তারা।
ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে সারাদেশে অচলাবস্থা তৈরি হয়, তখন সাপ্লাই চেইন ব্যাপকহারে বিঘ্নিত হয়েছিল। তখন বাজারে সবজি, মাছ, মুরগি, ডিম সরবরাহ একেবারে তলানিতে নেমে যাওয়ায় চড়ে যায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম।
তবে বর্তমানে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কারণে সরবরাহও বেড়েছে, চাল ছাড়া কমেছে সব ধরনের পণ্যের দাম।
প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৭০-১৮০ টাকা থেকে কমে তা এখন ১৫০-১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যদিও ঢাকার কোথাও কোথাও আরও ৫ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে।
একইসঙ্গে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দামও। ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি এখন বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকায়।
দিলু রোডের ডিম বিক্রিতা মো. ফজলু জানান, "ডিমের সরবরাহ এখন প্রচুর, তাই দামও কমেছে।"
এছাড়া কমেছে সব ধরনের সবজির দাম। ১২০ টাকায় উঠে যাওয়া বেগুন এখন বাজার ও মানভেদে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০-৮০ টাকার পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা; ঢেঁড়শ ৮০ টাকা থেকে কমে ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙা ১২০ টাকা থেকে কমে ৭০-৮০ টাকা, ছোট আকারের লাউ প্রতি পিস ৮০ টাকা থেকে কমে ৫০-৬০ টাকা, চিচিংগা ও পটল ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে আলুর দাম কমেনি। এখনও ৭০ টাকায়ই বিক্রি হচ্ছে আলু। অবশ্য উৎপাদন কম হওয়ার কারণে আলুর বাজার কয়েক মাস ধরেই অস্থির। একই অবস্থা পেঁয়াজের বাজারেও। প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনতে ১২০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
কমেনি চালের দাম
মিরপুর ১৪ নম্বর বাসিন্দা অলী হোসেন টিবিএসকে জানান, তিনি মহল্লার দোকান থেকে গত শুক্রবার বিআর-২৮ চাল কিনেছেন এক বস্তা। যেটি কদিন আগেও ২,৬০০ টাকা ছিল, সেটি এখন তাকে কিনতে হয়েছে ২,৭৫০ টাকা দিয়ে। অর্থাৎ, প্রতি কেজি চালে ৩ টাকা বাড়তি গুণতে হয়েছে এই ক্রেতাকে।
অলী হোসেন বলেন, "সরবরাহ সংকট কাটলেও দাম কমাননি বিক্রেতারা, যেটা ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।"
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে চাটখিল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন বলেন, "বোরো মৌসুমের শুরুতে, এপ্রিল-মে মাসে ধানের দাম ছিল ৯০০-৯৫০ টাকা মন। এখন এটা ১১৫০-১২০০ টাকা হয়েছে। কিন্তু এই দামটা আন্দোলন পরিস্থিতির মধ্যে বেড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন এটা যৌক্তিক না।"
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, মোটা চালের দাম সর্বোচ্চ ৫৪ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.১২ শতাংশ বেশি। অথচ বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পূর্বাভাস বলছে চাল উৎপাদন হবে ২ কোটি ২৪ লাখ টন— যেখানে গত বছর বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১১ লাখ টন।
মাঝারি মানের চাল (বিআর-২৮ এর মত চাল) বাজারে বিক্রি হচ্ছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৬৭ বেশি দামে। অথচ গত বছরের তুলনায় এবারে মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম ছিল মনপ্রতি অন্তত ২০০ টাকা কম।