‘আমার স্বামী নির্দোষ, কিন্তু পুলিশ তো আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না’
শনিবার দুপুর দেড়টা, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সিঁড়িতে ৫ বছরের সন্তান জিসানকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন তামান্না বেগম (২৮)।
'তোমার ভাই তো সেলসম্যান, কোনো দল করে না, ওরে পুলিশ বিনা অপরাধে নিয়ে আসছে। আমার এই ছেলেটার এখন কী হবে?' কাঁদতে কাঁদতে পাশে থাকা দেবর মেহেদী হাসানকে (২২) কথাগুলো বলছিলেন তামান্না।
কথা বলে জানা যায়, তামান্নার স্বামী রুয়েল ইসলাম (৩১) আকিজ কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করেন।
অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার ডিউটিতে গিয়েছিলেন রুহেল। খিলগাঁও এলাকায় টাকা তুলতে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে বিটিভি সেন্টার ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তামান্না টিবিএসকে বলেন, 'আন্দোলন চলাকালে আমার স্বামী বাসা থেকে বের হয়নি। সে ছিল আমাদের পরিবারের (৫ সদস্য) একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আকিজ কোম্পানিতে নতুন চাকরি হয়েছে। এখন চাকরিটা চলে গেলে আমাদের কী হবে?'
শনিবার ছুটির দিনে সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গণে তামান্নার মতো অনেকেই এসে ভিড় করেন একবারের জন্য স্বজন, প্রিয়জনকে দেখতে।
এদিন দুপুর ১১টার দিকে পুলিশ ভ্যানে ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে আসামিদের নিয়ে আসা হতে থাকে। কোর্ট প্রাঙ্গণে পুলিশ ভ্যান দেখলেই ছুটে যাচ্ছিলেন স্বজনরা। কেউ স্বজনের নাম ধরে ডাকছিলেন। কেউ আবার জানতে চাইছিলেন কোন থানা থেকে এসেছে গাড়িটি।
রুয়েলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার ছেলে জিসান জানে না উল্লেখ করে তামান্না বলেন, 'ছেলে বারবার জিজ্ঞেস করছে তার বাবা কখন আসবে। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও বলছেন, রুয়েল নিরপরাধী। পুলিশ তাকে কখন ছাড়বে?'
'আমিও জানি আমার স্বামী নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ তো আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না,' বলতে বলতেই চোখের পানি ছেড়ে দেন তামান্না।
এরই মধ্যে ফোন বেজে ওঠে। তামান্না কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলতে শোনা যায়, 'ভাবী, রুয়েল ভাইয়াকে কোর্টে আনছে। তুমি দুই তলায় আসো।'
কাঁদতে কাঁদতে সন্তানকে নিয়ে দোতলার দিকে চলে যান তামান্না।