বগুড়ায় ছাত্র-জনতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন বগুড়ার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ব্যানার-পতাকা মাথায় নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বিজয় মিছিল আর স্লোগানে যোগ দিচ্ছেন। বাঁধভাঙা আনন্দে শামিল হয়ে অনেকে বলছেন, দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন হওয়ার সুখবরে তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন। এমন খবরে সকাল থেকে বগুড়া খানিকটা শান্ত হয়ে যায়। তবে রাস্তায় বিক্ষিপ্তভাবে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, এমন খবর শুনে রাস্তায় বের হওয়ার শুরু করেন সাধারণ মানুষজন। এর সাথে যোগ দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের লোকজন।
দুপুরের পরে থেকে শহরের কলোনী, খান্দার, কলেজ বটতলা, ফুলবাড়ি, বিসিক, মাটিডালী, দত্তবাড়ি, ইয়াকুবিয়া মোড়, মফিজপাগলার মোড়, ঠনঠনিয়া, পলিটেকনিক, বনানী এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করেন। সব শ্রেণির মানুষের ঢলে বগুড়ার সাতমাথা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শহরের এই প্রাণকেন্দ্র দখলে নিয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। মিছিল করে আর স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানান সংকটের মুহূর্তে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে।
তাদের মধ্যে একজন হলেন শহরের অন্যতম নারী উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী তাহমিনা পারভীন শ্যামলী। স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বিজয় মিছিলে সাতমাথায় এসেছিলেন তিনি। শ্যামলী বলেন, 'মানুষের সাথে অন্যায় করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। প্রকৃতি খুব কঠোরভাবে প্রতিশোধ নিতে পারে। যে সরকারই হোক, জনগণকে সাথে নিয়ে থাকতে হবে। লাশের উপর দাঁড়িয়ে থাকা কোনো রক্তখোরকে মানুষ চায় না। আজ রক্তের হিসাব মেলেছে। মানুষের মুক্তি মিলেছে। এই কারণে আমরা রাস্তায়।'
তার সাথেই এসেছিলেন মেয়ে জেরিন জাহান পুষ্পিতা। স্কুল পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, এক স্বৈরাশাকের হাত থেকে দেশ মুক্ত হলো। এখান থেকে আগামীর শাসকদের শিক্ষা নিতে হবে। নইলে শিক্ষার্থীরা আবার তাদের এভাবেই শিক্ষা দিবে। আর দেশের আরেক যুদ্ধ বাকী রয়েছে। আগামীতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।'
বগুড়ার কাহালু এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম এসেছেন সাতমাথায় মিছিল করতে। তিনি মন্তব্য করেন, এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, এটি সবার। কারণ বিগত দিনে অন্যান্য রাজনৈতিক দল একাধিক আন্দোলন করেছে। কিন্তু, সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। শেখ হাসিনার বিদায় জাতির জন্য চরম সুখের খবর। দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে।
থানা ও উপজেলা পরিষদে আগুন
এদিকে বগুড়ায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা-অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে দিনব্যাপী দফায় দফায় তারা হামলা চালায়। আগুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস, বাসভবনসহ পুরো উপজেলা কার্যালয় ভস্মীভূত হয়।
উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সোমবার সকাল ১০ থেকে দফায় দফায় বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন এসব হামলা ও আগুনের কথা নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, দুপুরের পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে হামলাকারীদের অনুরোধ করলে– তারা ফিরে যায়।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বগুড়া সদর থানা ও তার আশপাশে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে থানা এলাকায় আগুনের ব্যাপক ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
থানায় হামলার পর পর সাতমাথায় জড়ো হওয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এদিকে দুপুরের দিকে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
জেলার একাধিক স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের কথা নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জাকির হাসান।