ভরা মৌসুমেও বরিশালের বাজারে ইলিশের আকাল, জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়
বরিশালের পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বর্ষার এ সময়ে ৪০০–৫০০ মণ ইলিশ আসত প্রতিদিন। শ্রমিকদের দম ফেলার ফুরসত থাকত না আড়তে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা প্রায় এক মাস আগে উঠে গেলেও দিনে ৫০ মণ ইলিশও আসছে না এ আড়তে।
যদিও মৎস্য অধিদপ্তর দাবি করেছে, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় কেজি সাইজের ইলিশে দাম কমেছে এক হাজার টাকা। ভারতে রপ্তানির সুযোগ বন্ধ হওয়ায় আর বর্ষা বাড়লে পাড়া-মহল্লায় ইলিশ পাওয়া যাবে। দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
পোর্টরোড মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সদস্য ইয়ার হোসন বলেন, ২৩ জুলাই ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এরপর প্রায় একমাস হতে চললেও জেলেরা নদী-সমুদ্রে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছে না।
নদীর পানিদূষণ, বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছে আসছে না বলে জানা তিনি। 'তারপরও আমরা আশা করছি, বৃষ্টি আরও বাড়লে মাছ বাড়তে পারে। মাছ না পাওয়া গেলে জেলেরা যেমন ঋণের চাপে পড়বেন, তেমনি আমরাও লোকসান গুনব।'
ক্রেতা মকবুল হোসেন বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ শেষ হয়ে এখন ভাদ্র মাস চলছে। এখনো ইলিশের বাজারে দামে আগুন। আজকে ইলিশ কিনতে এসে দেখি নিষেধাজ্ঞার সময়ে যে দামে বিক্রি হতো তেমনি।
'প্রতি বছর যে টিভি-পত্রিকায় দেখি ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে — তাহলে সে ইলিশ কোথায়?' প্রশ্ন করেন তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে প্রতিমণ এলসি সাইজের ইলিশ ৬০ হাজার, এক কেজির ইলিশ ৬৫ হাজার, ৫০০–৬০০ গ্রামের ইলিশ ৫৩ হাজার, জাটকা ৩৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রূপাতলী, বাংলাবাজার ও নতুনবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১২৫০ থেকে ১৩০০, ৮–৯শ গ্রামের ইলিশ ১৬০০, এক কেজির ইলিশ ১৭৫০, দেড়কেজি ২২০০–২৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশ বিক্রেতা আরাফাত হোসেন বলেন, আড়তে মাছ না আসায় কেজিতে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
'মাছের দাম নির্ভর করে মাছ আসার ওপরে। পরশু দিন আড়তে ১২টি ট্রাক এসেছিল। সেদিন কম ছিল। আজকে ৫টি ট্রাক এসেছে। মাছ নাই, তাই দামও বেড়েছে,' জানান তিনি।
ক্রেতা ইকবাল হোসেন বলেন, 'ফেসবুকে দেখলাম শিক্ষার্থীরা দাম কমিয়ে দিয়েছে। এসে দেখি দাম আগের মতই আছে। খুচরা বাজারে জাটকার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৮৬০ টাকায়। অন্য ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করিনি। জাটকার দাম এত হওয়ায় তেলাপিয়া কিনে বাসায় ফিরছি।'
মৎস্য আড়ৎদার আক্তার হোসেন বলেন, 'মাছের ট্রলার-জেলে সব মিলিয়ে যে টাকা খাটিয়েছি, তা কিছুই উঠছে না। বাজারে মাছের দাম অনেক বেশি।'
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি মাছের উৎপাদন ঠিকই আছে দাবি করে বলেন, সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখন আর আড়তে আসতে হয় না জেলেদের।
'যেমন মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, ভোলার জেলেরা মাছ শিকার করে হয় ঢাকা না হয় চাঁদপুরে নিয়ে যান। আবার বরগুনা, পটুয়াখালী এলাকার জেলেরা সড়ক পথে সরাসরি ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। এজন্য স্থানীয় বাজারগুলোতে ইলিশ চাহিদার বেশি সরবারহ হচ্ছে না,' বলেন এ কর্মকর্তা।
জেলেদের হতাশ না হয়ে আরেকটু ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, 'সরকার ইলিশ বিদেশে পাঠানো কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে স্থানীয় বাজারগুলোতে ইলিশের সরবরাহ বাড়বে।'