শিক্ষার্থীদের ও সরকারের বাজার তদারকি সত্ত্বেও বেড়েছে চালের দাম
বাজারে সিন্ডিকেট বন্ধ করে পণ্যের দাম সহনীয় করার উদ্দেশ্যে সরকার ও শিক্ষার্থীদের কড়া তদারকির মধ্যেই চালের দাম বাড়ছে।
ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম অন্তত ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
প্রতি কেজি মোটা চাল কিনতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়, যা মাসখানেক আগেও ৫২ থেকে ৫৩ টাকা ছিল। নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো যেসব মাঝারি মানের চিকন চাল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো, সেগুলো এখন বাজারভেদে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের চাল পূর্বে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হলেও সেগুলো এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকার কমে মিলছে না।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ অবশ্য বাজারমূল্য থেকে দাম কমিয়েই দেখাচ্ছে। তারপরও এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.১৮ শতাংশ বেশি এবং গত মাসের তুলনায় ২.৮৮ শতাংশ বেশি।
বাড্ডার মিজান সুপার স্টোরের প্রোপাইটর মিজানুর টিবিএসকে বলেন, "প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) চালের দাম অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।"
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সারাদেশে বাজার ব্যবস্থাপনায় চাদাবাজি বন্ধ করার প্রচেষ্টা ও ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে তদারকি চালানোর মধ্যেই চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং শিক্ষার্থীদের বাজার মনিটরিং শুরু হয়।
এদিকে খুচরা বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির জন্য পাইকারী ব্যবসায়ীদের দায়ি করলেও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৭ থেকে ১০ দিন অগে দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও সেটা এখন কমতে শুরু করেছে। ব্যাংক লেনেদেন সীমাবদ্ধ হওয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে নগদ টাকার লেনদেন করতে না পেরে চালের সরবরাহ কমে যাওয়াকে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকার বেশী তুলতে না পারলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন বাধা নেই।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের আড়তদার মো আনিছুর রহমান টিবিএসকে বলেন, সম্প্রতি চালের দাম বাড়তি থাকলেও সেটা আবার কমতে শুরু করেছে। তিনি অবশ্য কর্পোরেট বিক্রেতা ও মিল মালিকদের পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানোর দাবি তুলেছেন।
তবে নওগার ধান চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা দাবি করেন, মিলগেটে চালের দাম বাড়েনি। ঢাকার যেসব পাইকারী বাজার আছে, সেখানে মনিটরিং করলে দাম কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "১৫ টনের একটি গাড়িতে ১০ লাখ টাকার বেশি চাল থাকে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকার বেশি তুলতে না পেরে অনেকেই টাকা পাঠাতে পারছেন না। যে কারণে চালের সরবরাহেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।"
কুষ্টিয়ার মা ভান্ডারী অটো রাইস মিলের মালিক ও রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ রানা জানান, চালের দাম বেড়েছে ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে। শুকনো ধানের প্রকারভেদে মনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, "এবারে মিল মালিকরা ধান মজুদ করেনি। নিয়মিত বাজার থেকে কিনছে। এ কারণে দামটাও বেশি।"
কৃষি বিভাগ বলছে, গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে বোরো মৌসুমের চাল উঠতে শুরু করে। চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় এই মৌসুমে কোন ধরনের বৈরি পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় ২ কোটি ২০ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে।
তবে এত বড় উৎপাদন মৌসুমের তিন মাস পার না হতেই চালের দাম বাড়ানোকে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলেও মনে করছেন অনেকে।
অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারের কাছে চালের মজুদও বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ১৫৩ টন চাল সহ খাদ্যশস্যের মজুদ রয়েছে ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৬৫ টন।
এছাড়া প্রতি মাসে এক কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তা এবং সারাদেশের চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে ২২ আগষ্ট একটি সভা ডেকেছিল বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশন।
তবে কমিশনের পরিচালক মোহাম্মদ মনজুরুল হাসান সাক্ষরিত এক নোটিশে বুধবার (২১ আগস্ট) চালের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক সভা স্থগিত করার কথা বলা হয়।
স্থগিত হওয়া এই সভাটি আগামী সপ্তাহের যেকোন দিন করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।