তিন দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশের ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে: ইউনিসেফ
ইউনিসেফ জানিয়েছে, গত তিন দশকে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ২০ লাখের বেশি শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ জানায়, গত ৩৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বন্যায় বহু ঘরবাড়ি, স্কুল ও গ্রাম ভেসে গেছে। বন্যায় এ অঞ্চলের মোট ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নজিরবিহীন মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলো উপচে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং ৫ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় নদীর পানি উপচে পড়ে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও মাঠ তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। তাদের কাছে নেই কোনো খাবার কিংবা জরুরি কোনো ত্রাণসামগ্রী।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগ্যাম বলেন, 'বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বিধ্বংসী বন্যা শিশুদের উপর চরম আবহাওয়া এবং জলবায়ু সংকটের প্রভাবের একটি দুঃখজনক অনুস্মারক। অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনদের, তাদের বাড়ি, স্কুল হারিয়েছে এবং এখন সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে।'
জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব তুলে ধরে ব্রিগহাম বলেন, 'বছরের পর বছর বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন স্পষ্টতই শিশুদের জীবন বদলে দিচ্ছে। আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার এবং শিশুদের জন্য খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।'
সরকারি কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার অভিযান চালালেও কিছু দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম অব্যাহত থাকায় আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে ইউনিসেফ।
অংশীদারদের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ ১ লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ ৩ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: ৩.৬ মিলিয়ন পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি সঞ্চয়ের জন্য ২৫ হাজার জেরি ক্যান এবং ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মুখে খাওয়ার স্যালাইন প্রভৃতি।
তবে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা এখনও তীব্র। মানুষ ও শিশুদের জরুরি ভিত্তিতে নগদ অর্থ সহায়তা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, হাইজিন কিট, জরুরি ল্যাট্রিন, স্যানিটারি প্যাড এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রয়োজন। অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসা এবং গর্ভবতী নারীদের সহায়তার জন্য জরুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অবিলম্বে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
এই বন্যার আগে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা এবং গত মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালসহ অন্যান্য দুর্যোগে ৫০ লাখ শিশুসহ সারা দেশে ১৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
এসব সংকট মোকাবিলায় শিশু ও গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ইউনিসেফ।