যেকোনো মূল্যে শিল্প কারখানা সচল রাখতে হবে: শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব
যেকোনো মূল্যে শিল্প কারখানা সচল রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, 'যেকোনো মূল্যে কারখানা সচল রাখতে হবে। এটা বন্ধ হলে মালিক-শ্রমিক সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া বিকেএমইএ'র কার্যালয়ে গার্মেন্টস কারখানাসহ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সচিব বলেন, 'হাজিরা দিয়ে বা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে আন্দোলনের জন্য বাইরে বের হয়ে গেলে কাজের ক্ষতি হবে। উৎপাদন কম হবে। এতে করে বায়ারদের চাহিদামতো পণ্য দেওয়া সম্ভব হবে না।'
তিনি বলেন, 'শ্রমিকদের একটি দাবি হলো বেতন দ্বিগুণ করতে হবে। কিন্তু কাজটি তো নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। প্রতি বছর ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর কথা, কিন্তু মূল্যস্ফীতি হয় ১০ শতাংশ। ফলে তাদের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। তাই তাদের বেতন বাড়ানো উচিত, কিন্তু সেটা নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি মালিক ও শ্রমিকদের একটি বৈঠক হয়েছে। কারখানার মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, শ্রমিক অসন্তোষ হলেই কারখানা বন্ধ করা হবে। এটা ঠিক নয়, শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের কথা বলতে দিতে হবে। কথা শোনার মতো ধৈর্য যদি মালিকদের না থাকে, তাহলে কোনো সমাধান হবে না। কারণ আর্মি পাহারা দিয়ে গার্মেন্টস চলতে পারে না।'
সচিব বলেন, ৫ আগস্টের পর সবাই নিজ নিজ সেক্টরে পরিবর্তন চাচ্ছেন। কিন্তু একসাথে সব পরিবর্তন করা কিংবা সব দাবি একসাথে পূরণ করা সম্ভব না। শ্রমিক নেতাদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা। আপনাদের যেকোনো অভিযোগ ও সমস্যা আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখব।
তিনি আরও বলেন, 'মালিকদের মধ্যে ঐক্য আছে। কিন্তু শ্রমিকদের সংগঠনের কোনো ঐক্য নেই। আপনারা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হন, তাহলে আলোচনার টেবিলে সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।'
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বায়াররা এই দেশে আসতে চাইবে না, অর্ডার দিতে চাইবে না। এই সংকটের সময় শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই একসাথে কাজ করতে না পারলে সংকট আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, 'যেকোনো দাবি থাকতে পারে, তা আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যেতে পারে। কিন্তু কারখানা ভাঙচুর করে, হামলা করে কোনো লাভ হবে না। কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকদের কোনো লাভ হবে না।'
সভাপতির বক্তব্যে বিকেএমইএ'র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'শ্রমিকদের যৌক্তিক সব দাবি আমরা পূরণ করব, কিন্তু অযৌক্তিক কোনো দাবি মেনে নেওয়া হবে না। তিনটি বিদেশি কারখানার মালিক এখানে ছিলেন, তাদের অন্যান্য দেশেও কারখানা আছে। তারা বাংলাদেশে আরও বৃহৎ পরিসরে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবস্থা যদি এমন থাকে তাহলে তারা এই দেশ থেকে তাদের ব্যবসা অন্য দেশে নিয়ে যাবেন।'
তিনি বলেন, 'বিদেশিদের হাতে এই ব্যবসাটা যাতে চলে না যায়। কারা লাভবান তা আপনারা সবাই জানেন। কাজেই এই শিল্প যাতে ধ্বংস না হয়, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। এই দেশটা আমাদের, এই দেশ এগিয়ে নিতে মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। দেশের এই শিল্প যাতে অন্য কোনো দেশে চলে না যায়, সেই লক্ষ্যে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।'
এছাড়াও সভায় মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) তরিকুল আলম, শিল্প পুলিশ সদর দপ্তরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল সিবগাত উল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, জেলা কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল আতিক, বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।