পার্বত্য চট্টগ্রাম: উত্তেজনা হ্রাসে স্থানীয় নেতাদের সহায়তা কামনা সেনাবাহিনীর
পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সহিংসতাকে ঘিরে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, '…চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় [খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান] ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে।'
সশস্ত্র বাহিনী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে পার্বত্য অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'যথাযথ তদন্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
জেলাগুলোতে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
যেভাবে সহিংসতা ছড়ায়
বিবৃতিতে আইএসপিআর বলেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরির একটি ঘটনায় মৃত নূর নবীর ছেলে মো. মামুন নামক স্থানীয় এক যুবককে জনতা পিটিয়ে হত্যা করার পর চলমান সহিংসতা শুরু হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন দীঘিনালা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। 'মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফ (মূল)-এর কিছু সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০–৩০ রাউন্ড গুলি ছড়ে। এ প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নি সংযোগ করে।'
সংঘর্ষে ছয়জন আহত হন। তাদেরকে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকা সমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাকর করে তোলে।'
এ পরিস্থিতির আলোকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে সব উপজেলায় সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, পুলিশ ও আনসার দল যৌথ টহল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সকল পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয়।
'ইউপিডিএফ-এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে' তিনজন নিহত
আইএসপিআর-এর বিবৃতি অনুসারে, খাগড়াছড়ি জোনের একটি সেনা টহল দল ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে একজন মুমূর্ষ রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়দের একটি দল তাদের বাধা দেয়।
'এক সময় ইউপিডিএফ (মূল)-এর সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পালটা গুলি চালায়। উক্ত গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন বলে জানা যায়।'
পানছড়িতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মোটরসাইকেলে থাকা একদল যুবকের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করে। ইউপিডিএফ (মূল)-এর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা ফায়ার ব্রিগেডের অফিসও ভাঙচুর করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে আইএসপিআর।