রাতুলকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না বাবার
বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে রাতুল (১৫) একজন চিকিৎসক হবে। মানুষের সেবা করবে। কিন্তু তা আর হলো না। ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশাহারা বাবা।
গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় জুনায়েদ ইসলাম রাতুল। দেড় মাস ঢাকা চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
রাতুল বগুড়ার হাকিম মোড় ঘোনাপাড়া এলাকার মুদি দোকানি জিয়াউর রহমানের ছেলে। সে জেলার উপশহরে পথ পাবলিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত।
রাতুলের বাড়িতে এখনো থরেথরে সাজানো তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র। বিছানা-বালিশ, কাপড়-চোপড়, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বইপত্র সবই আছে। কেবল নেই রাতুল।
জিয়াউর রহমান বলেন, আন্দোলনের মধ্যে ছেলেকে বাইরে যেতে অনেকবার নিষেধ করেছিলাম। ও বারবার বলত, আন্দোলনে যাবে। ওইদিনও নিষেধ করেছিলাম বাড়ি থেকে যেন বের না হয়। এরপরেও সে মিছিলে গেল, পুলিশের গুলি খেলো।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক ব্যক্তি রাতুলকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতুলের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে তিনিই ফোন করে বিষয়টি জিয়াউর রহমানকে জানান। ফোন পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। ডাক্তাররা সিটি স্ক্যান করে দেখেন রাতুলের মাথার ভেতর গুলি। এরপর তারা রাতুলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর রাতুলকে ওইদিন রাতেই নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জিয়াউর রহমান বলেন, ডাক্তাররা খুব ভালোভাবে আমার ছেলের চিকিৎসা করেছে। সরকারও চিকিৎসার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। কিন্তু আমার সন্তান আর পৃথিবীতে নাই।
তিনি বলেন, রাতুল ফুটবল খেলা, সাইকেল চালানো এবং স্কেটিং করতে পছন্দ করতে। পড়াশোনাতেও খুব ভালো ছিল।
রাতুলকে প্রথমে আলেম বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন জিয়াউর রহমান। এজন্য ছেলেকে মাদ্রাসায়ও ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ার পর রাতুল আর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেনি। পরে ওকে পথ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করানো হয়।
রাতুলের বাবা বলেন, এরপর ছেলেকে ডাক্তার বানানোর চিন্তা ছিল। বিনা চিকিৎসায় যেন কেউ মারা না যায়, সবাই যেন সঠিক চিকিৎসা পায়, সেটি ভেবে ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম।
রাতুলের বোনের শ্বশুর আব্দুর রহমান বলেন, রাতুল একমাস দশদিনের মতো কোমায় ছিল। গত তিনদিন আগে সে কোমা থেকে বেরিয়ে আসে। গতকালও কথা বলেছে। মুখে খাবার খেয়েছে। সেই ছেলে আজকে মারা গেল।