পুরনো বন্ধুকে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা ইউনূসের
বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার ইউনূস বলেন, পুরনো বন্ধুকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত।
অধ্যাপক ইউনূস ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগ এবং পূর্ববর্তী সরকারের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও বলেন তিনি।
তারা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একই গাড়িতে উঠে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ভেন্যুর উদ্দেশে রওনা দেন।
এর আগে আজ দুপুর ২টার দিকে এক সংক্ষিপ্ত সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এটি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার ইব্রাহিম ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে দুপুর ২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মো. তৌহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার।
প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছেন এবং এটি ৮ আগস্ট অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশী কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার ইব্রাহিমকে সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নেওয়া হয়েছে। সফর চলাকালীন তিনি কয়েক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা একই হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে, যেটি একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ হবে।
এই বৈঠকে অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শ্রমশক্তি রপ্তানি, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক ৮ লাখ বাংলাদেশি বসবাস ও কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার জন ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে সেখানে গেছেন।
দুই নেতা বৈঠকের আগে একান্তে আলোচনা করবেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করবেন এবং সেখানে অতিথি বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
মালয়েশিয়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ার হতে যাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সেখানে আলোচনা করা হবে।
আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য আসিয়ানে বাংলাদেশের "সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে উত্থাপন করা হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
এই সফর বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা এবং স্থায়ী বন্ধুত্বের একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হবে, বলেছেন উপদেষ্টা।
৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক উপমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই বছরের আগস্টে ড. ইউনূস আনওয়ার ইব্রাহিমকে বাংলাদেশের সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান, যাতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশে অষ্টম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ।
ড. ইউনূসের মালয়েশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার রয়েছে, যেখানে তার সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং 'তিন শূন্যের ধারণা' নিয়ে কাজ করা হয়।
মালয়েশীয় কিছু কোম্পানি, যার মধ্যে কয়েকটি সার্বভৌম ফান্ডের মালিকানাধীন, বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এখন সেগুলো শিক্ষার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
মালয়েশিয়া দাবি করেছে, দেশটি চিকিৎসা পর্যটনের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে এবং বাংলাদেশিরা সেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
সফর শেষে আজ সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর।