১১টি বাড়ার পর সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা ১২৫
সুন্দরবনে ২০২৩-২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১২৫টিতে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এছাড়া সারা পৃথিবীতে এখন বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৪০টি।
আজ (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে সুন্দরবনে বাঘ জরিপ ২০২৪-এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ সালে বাঘ শনাক্ত করা হয়েছে ১২৫টি। ১০০ বর্গমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২.৬৪।
এর আগে ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। ২০১৮ সালের শুমারির তথ্য অনুযায়ী, বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ২০২৪ শুমারিতে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি।
গত বছরের জানুয়ারি, এপ্রিল, নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের মার্চে সুন্দরবনে ওই জরিপ করা হয়। বনের ২ হাজার ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওই জরিপ চালানো হয়। সেখানে স্থাপন করা হয় মোট ৬৫৭টি ক্যামেরা ফাঁদ। বাঘ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই ক্যামেরায় ছবি ওঠে। ক্যামেরায় ওঠা মোট ৩১ হাজার ৪৮২টি ছবির মধ্যে বাঘের ছবি ছিল ৭ হাজার ২৯৭টি।
এবারের জরিপে ২১টি বাঘ-শাবকের ছবি পাওয়া গেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ শুমারিতে মাত্র ৫টি বাঘ-শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। এই জরিপে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
বাঘ সংরক্ষণে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশ্যে বনের ৫৩.৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সেখান থেকে সকল ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব হ্রাসে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভিতরে ১২টি মাটির উঁচু কিল্লা/ডিবি নির্মাণ করা হয়েছে।"
তিনি জানান, বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করা হচ্ছে। বাঘ সংক্রান্ত অপরাধ উদ্ঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সম্মানী প্রদান করা হচ্ছে। লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেবার জন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমের সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।"
উপদেষ্টা বলেন, "ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে বাঘ জরিপে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দেশের সকলের জন্য আনন্দদায়ক ও তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ। বাঘ যেহেতু অতিবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং বাঘের জন্য এখনো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেহেতু বাঘ সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।"
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইইউসিএন কর্তৃক বাঘকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রির মধ্যে বর্তমানে ১০ টি দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, রাশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাঘ রয়েছে। অবশিষ্ট ৩টি দেশ অর্থাৎ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের বনাঞ্চল হতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।