চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় মামলা, আটক ২
চট্টগ্রাম শহরের একটি পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল (১০ অক্টোবর) রাতে তাদের আটক করা হয়।
চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. রইস উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে জানান, আটককৃতরা হলেন তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক শহীদুল ইসলাম (৪২) ও দারুল ইরফান মাদ্রাসার শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম (৩৪)।
তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্য চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার জেএম সেন হল মণ্ডপের মঞ্চে যান।
উল্লেখ্য, নগরীর জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একটি ইসলামিক গানের দল গান পরিবেশন করে। সে গানের ভিডিও পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয় সদস্য মঞ্চে ওঠেন। তারা শাহ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা 'শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান' শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করেন। এর মধ্যে 'শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম' গানের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
চট্টগ্রাম নগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যখন গান গাওয়া হয়েছে, তখন আমি সেখানে ছিলাম না। আমাদের জয়েন্ট সেক্রেটারি সজল দত্তের সঙ্গে কথা বলে তারা মঞ্চে উঠেছিলেন। এটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।'
জোরপূর্বক মঞ্চে ওঠার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের জয়েন্ট সেক্রেটারির অনুমতি নিয়ে তারা গান গেয়েছেন। তবে আমরা সভাপতি ও সেক্রেটারি এ বিষয়ে জানতাম না।'
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমিকে নগরীর জামায়াত-সংশ্লিষ্ট সংগঠন বলা হচ্ছে। তবে সংগঠনটির সভাপতি, ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত বলছে, এটি জামায়াতের কোনো অঙ্গ সংগঠন নয়।
জোরপূর্বক মঞ্চে গান গাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান। তিনি বলেন, 'জেএম সেন হল পূজা উদ্যাপন কমিটির সহকারী সেক্রেটারি সজল বাবু আমাদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি ফোন করে বলেন, আপনারা আসুন, দেশাত্মবোধক গানের জন্য ফ্লোর দেব।
'আমাদের ছয়জন সেখানে গিয়েছিলেন এবং একটি দেশাত্মবোধক ও একটি সম্প্রীতির গান পরিবেশন করেছেন। সেখানে কোনো জামায়াত নেতা ছিলেন না।'
তিনি আরও বলেন, 'এটি জামায়াতের কোনো অঙ্গ সংগঠন নয়। আমরা কয়েকজন আদর্শিক মানুষ শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছি।'
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমিরের মুখপাত্র আ জ ম ওবায়দুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, 'এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা খোঁজ নিয়েছি, এখানে জামায়াতের কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।'
এদিকে গান পরিবেশনের ঘটনায় 'ছাত্রশিবিরের নাম জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর' প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা।
শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদকের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'উক্ত ঘটনার সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'
ঘটনার পর পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সেক্রেটারি নাঈম আলী ও সুচিস্মিতা তিথি।
জেলা প্রশাসক বলেন, 'যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
পূজা উদযাপন কমিটি ঘটনার জন্য অনুমোদনদাতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ দে ওই ঘটনার পর মঞ্চে উঠে বলেন, 'যিনি [সজল দত্ত] অনুমতি দিয়েছেন, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।'