অভিযানের ভয়ে তেজগাঁও আড়তে দুদিন ধরে ডিম বিক্রি বন্ধ, বেড়েছে দাম, সংকটের আশঙ্কা
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের ভয়ে রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির ব্যবসায়ীরা দুদিন ধরে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। এতে ঢাকার বাজারে একদিকে যেমন সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে ইতোমধ্যেই খুচরা বাজারে ডজন প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে হলে, তাদের আরও কম দামে ডিম কিনতে হবে। কিন্তু আড়তদারদের কাছ থেকে তাদের বেশি দাম দিয়ে ডিম কিনতে হচ্ছে। তাই সে অনুযায়ী দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিংয়ে এসে ব্যবসায়ীদের বাড়তি দাম নেওয়ার জন্য জরিমানা করছে।
ঢাকার খুচরা বাজারে আজ সোমবার প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা দু-তিন দিন আগেও ছিল ১৬৫-১৭০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার (১৩ অক্টোবর) রাত থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন আড়তদাররা। গতকাল থেকে আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০.৫৮ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ১১.১০ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা বেঁধে দেয়। সে হিসেবে প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির বাদামি ডিমের মূল্য ১৪৩ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই।
তবে আড়তদারদের দাবি, তাদের একটি ডিম কিনতেই খরচ পড়ছে ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা। তাহলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কীভাবে ডিম বিক্রি করবেন?
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে হলে আমাদের তার চেয়ে কম দামে ডিম কিনতে হবে। কিন্তু আমরা সেটি পারছি না। আবার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করলে সরকার জরিমানা করে। এ পরিস্থিতিতে আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।'
ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪-১৫ লাখ পিস ডিম আসে, যা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তারা জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ডিম, মুরগির আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী, খামারিদের প্রতিনিধিসহ পোল্ট্রি খাতের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা ডেকেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
আমানত উল্লাহ বলেন, 'ভোক্তা অধিদপ্তরের সভায় বিষয়টি সুরাহা হলে আমরা আবার ডিম বিক্রি শুরু করব।'
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় বন্যার পর থেকেই মূলত বাজারে ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে।
লাইভস্টক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে প্রতিদিন ৫০ লাখ পিস ডিমের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে প্রতিদিন পাঁচ কোটি পিস চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নেমে এসেছে চার কোটিতে।
এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার গত ৮ অক্টোবর সাড়ে চার কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির খবরে বাজারে কিছুটা দাম কমলেও গত দুদিনে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি ডজনে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।
টিসিবির তথ্য বলছে, সোমবার ঢাকার বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। যা এক মাস আগের তুলনায় ১২.৩৮ শতাংশ বেশি।