প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জিপিএ ৫; সাবেক সচিবের ছেলের এইচএসসির ফল বাতিল
ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে এই ঘোষণা দেন। বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র চন্দ্র নাথ। কলেজের প্রাক-পরীক্ষায় ফেল করলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি।
ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে—পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জিপিএ-৫ পাইয়ে দিয়েছেন বাবা নারায়ণ চন্দ্র নাথ। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায় এবং নিশ্চিত হয় যে, ফলাফলে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর, অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে গত ৯ জুলাই, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। তবে, সরকার পরিবর্তনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর, তাকে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মূলত, ফলাফল পুনরায় পর্যালোচনার জন্য অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অনলাইনে আবেদন করলে এ বিতর্ক শুরু হয়। নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী, বনশ্রী দাস, ছেলের খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনের জেরে থানায় যান এবং অভিযোগ করেন যে তার পরিবার থেকে এমন কোনো আবেদন করা হয়নি। এ নিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
একই সময়ে, অভিযোগ ওঠে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছেও আবেদন করা হয়েছে, তিনি যেন এই পর্যালোচনা আবেদনের প্রতি গুরুত্ব না দেন। সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুসতাফা কামরুল আখতার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তদন্তের দাবি তুলে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখায় গত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে ঘটনা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বর্তমানে এই মামলা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্তের আওতায় আছে।
তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, এই বিষয়ে তদন্ত একাধিকবার বিলম্বিত হয়। তদন্ত কমিটি গত মে মাসে অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে তলব করলেও তিনি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্থগিতের আবেদন করেন। আদালত পরে রিটটি বাতিল করে এবং পরে আবার তদন্ত শুরু হয়।
ফলাফল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে এখন ফৌজদারি মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।