হাসিনার আমলের সকল জ্বালানি চুক্তি বাতিল ও অপরাধীদের বিচারের দাবি
বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চুক্তি বাতিল ও সম্ভাব্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। একইসাথে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ (শনিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে 'জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের রূপরেখা বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ছয় দফা দবি পেশ করে সংগঠনটি। সেখানে বলা হয়, রুপপুর, রামপাল, মাতারবাড়ি ও পায়রার মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিদ্যুৎ, তরল জ্বালানি, গ্যাস, কয়লা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অনিয়ম ও চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল বা সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসাথে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাতিল করতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার পর স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাপ করতে হবে এবং তা জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে।
সভার আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় লুন্ঠনমূলক হওয়ায় ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ভোক্তারা জ্বালানি সুবিচার বঞ্চিত বিধায় আদানির সাথে সম্পাদিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কিত সকল চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে বাতিলের দাবি জানানো হয়। একইসাথে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উজানে ১২টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা এবং এগুলো বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় কূটনেতিক পদক্ষেপ নিতে সরেকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সভায় অবিলম্বে কাতিহার-পার্বতীপুর-বারনগর ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্পের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানানো হয়। যাতে করে ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিয়ে উৎপন্ন জলবিদ্যুৎ সরিয়ে নেওয়ার জন্য এটি ভারত ব্যবহার করতে না পারে।
সভায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল ইসলাম বলেন, "টন প্রতি কয়লা আমদানি ব্যয় কম-বেশি ১০০ ডলার হলেও পিডিবি সেখানকার কয়লা ক্রয় করে ১৮৫ ডলারে। এই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনলে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানো যাবে।"
তিনি আরও বলেন, "বিদ্যুৎ খাতে বছরে বছরে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তার থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমাতে হবে। দেশের চল্লিশটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফার্নেস ওয়েল দিয়ে বিদুৎ উৎপাদন করছে না। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।"
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহের বিদ্যমান মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক কি-না তা যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানোর জন্য বিপিসিকে নির্দেশ প্রদানের দাবি করা হয়।
আলোচনায় ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অন্যায্য ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানে ভর্তুকি বন্ধ করে জনগণের উপর মূল্য বৃদ্ধির চাপ কমানোর কথা বলা হয়। একইসাথে স্বৈরাচারী সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচারের দাবি করা হয়। এক্ষেত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, কনসালট্যান্ট, উপদেষ্টাসহ সকল জ্বালানী অপরাধীর বিচার নিশ্চিতের কথা বলা হয়।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, "আমাদের দেশের সম্পদের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান করতে হবে।"