গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের বিনামূল্যে সুচিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউয়ে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের বিনামূল্যে সুচিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই অর্থে আহতদের চিকিৎসার সব ধরনের টেস্ট ফি, ওষুধ ও পথ্য সরবরাহ করা হবে।
এছাড়া, গুরুতর আহতদের প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য পাঠানোসহ গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ ছাত্র-জনতার তথ্য সংগ্রহে একটি বিশেষ সেল গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভু্ত্থানে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করার পর— তাদের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করে। তার প্রেক্ষিতে, গত ২৪ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এ বরাদ্দ মঞ্জুর করেছে। এই অর্থ শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকা ছাত্র-জনতার জন্য ব্যয় হবে।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসার অংশ হিসেবে হাসপাতালটির একটি ভবনের দু'টি তলার সকল কেবিন সংস্কার করতে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, ইমপ্ল্যান্ট বা ডিভাইস, প্রসিডিউর, পথ্য বাবদ এক কোটি ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সকল আহতদের একটি ডেটাবেইজ তৈরি করা এবং ওয়েব-ভিত্তিক অনলাইনে তথ্য যাচাইয়ের সুবিধা সৃষ্টির জন্য ১০ লাখ টাকা, ফিজিওথেরাপির জন্য ২০ লাখ টাকা, সাইকোথেরাপি বাবদ ১০ লাখ টাকা এবং যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য তিন মাসের জন্য চুক্তিতে দু'জন ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ বাবদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং তিন মাসের জন্য দু'জন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ বাবদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত ২৩ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের তথ্য যথাযথভাবে সংকলন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ সেল গঠন করেছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল)-কে আহ্বায়ক করে গঠিত সেলে যুগ্মসচিব (প্রশাসন) সদস্য হিসেবে এবং উপসচিব (হাসপাতাল) সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এর কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই সেল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে তালিকা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তালিকা যাচাই-বাছাই করে অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করবে।
শহীদদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে এই সেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিন তথ্যানুসন্ধ্যান করতে পারবে, এবং স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের সহায়তা গ্রহণ করবে।
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের হাসপাতালে সুচিকিৎসা পেতে সহায়তা করবে এই সেল। শহীদ ও আহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি গুরুতর আহতদের প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে সহায়তা করবে।
সেলের কার্যপরিধিতে আরও বলা হয়েছে, 'জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিশেষ সেল। এজন্য তথ্যানুসন্ধান এবং ডকুমেন্টেশনের (নথিভুক্ত করার) যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গণঅভ্যুত্থানের ছবি, ভিডিও, বক্তব্য, প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধ, রিপোর্ট সংগ্রহ করবে।'
ক্লাউড সোর্স থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই এবং সংরক্ষণ করবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করবে। এই সেল গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি ও তথ্যচিত্র তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
গণঅভ্যুত্থান বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিথ সংবাদের তথ্য যাচাই করবে এই সেল। ভুল তথ্যের বিষয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে সঠিক তথ্যও তুলে ধরবে তারা।