আওয়ামী লীগসহ ১১ রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা চেয়ে রিট
আওয়ামী লীগসহ ১১টি রাজনৈতিক দলকে সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও মো. আবুল হাসনাত-সহ তিনজন।
অন্য ১০টি রাজনৈতিক দল হলো- জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরীকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী দল, মার্ক্সিস্ট-লেলিনিস্ট (বড়ুয়া) ও সোসিওলিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ।
আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
রিটের ওপর আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
অন্যদিকে, এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদের (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েও রিট করা হয়েছে।
রিট সূত্রে জানা যায়, ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দলগুলোকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।
রিট আবেদনের পর নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রিটের বিষয়ে পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
পোস্টে তারা লিখেছেন, 'আজকে ২টি রিট করেছি।
১. আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না সে বিষয়ে প্রথম রিট।
২. এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদের পলিটিক্যাল সব এক্টিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট।'
দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন নিষিদ্ধের কোনো কথা রিটে নেই বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এর আগে, গেল আগস্টে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আবেদন করা হয়। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর ওই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পরে গত ২৩ অক্টোবর, অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সময়ে হওয়া নির্বাচনগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচন অধিকাংশ বিরোধীরা বর্জন করেন; ফলে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে এবং জাতীয় পার্টি ৩৪ আসন নিয়ে হয় প্রধান বিরোধী দল।
পরের বার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচনেও ভোট কারচুপির অভিযোগ আনে বিএনপি।
ওই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ৭ আসন; জাতীয় পার্টি ২৬ এবং আওয়ামী লীগ ২৫৭ আসন পেয়েছিল।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলও বর্জন করে বিএনপি। এই নির্বাচনের আগে বিএনপি সরকারকে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানায়। তবে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।
সবশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২২৪টি আসন এবং জাতীয় পার্টি পায় ১১টি। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা— যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সদস্য— তারা ৬২টি আসনে জয়লাভ করেন।