সাশ্রয়ী ও উন্নত সেবার নতুন হজ প্যাকেজ আনছে সরকার
ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, হজযাত্রীরা সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন সেবার মাধ্যমে আরও সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক প্যাকেজ পেতে যাচ্ছেন।
ইউএনবির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে খালিদ হোসেন বলেন, ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজটি আগামী ৩০ অক্টোবর দুপুরে উদ্বোধন করা হবে। হজযাত্রা আরও সহজলভ্য করতে এই প্যাকেজে থাকছে বিশেষ ছাড়।
হজযাত্রা আরও ব্যয়সাশ্রয়ী করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ভ্রমণ ও আবাসন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সাম্প্রতিক আলোচনার কথাও তুলে ধরেন খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, গত ২২ অক্টোবর আমরা বিমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি। বিমান খরচ কমাতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে এবং বেবিচক ও এনবিআর কিছু ফি মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই ছাড়ের ফলে হজযাত্রীপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ কমতে পারে বলেও জানান তিনি।
সরকার বিমান ভাড়া এবং হোটেল ভাড়ার খরচ কমানোর দিকে মনোনিবেশ করছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মক্কা ও মদিনায় আবাসন সুবিধাসমূহ পরিদর্শন করছেন।
তিনি বলেন, বিমান ভাড়া ও হোটেল খরচকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের লক্ষ্য হলো হজের সার্বিক খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা।
তিনি হজের প্রাথমিক খরচের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ, বিমান ভাড়া, মক্কা মদিনায় হোটেল ভাড়া, তাঁবু ভাড়া এবং মিনা ও আরাফাতের খাবারের মতো ব্যয়ের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।
'এছাড়া বাস, গাইড, ভিসা প্রসেসিং, স্বাস্থ্য বিমা ও কোরবানির পশুর খরচ রয়েছে।'
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ব্যয় কমানোর প্রাথমিক ক্ষেত্র হলো মক্কা ও মদিনায় বিমান ভাড়া ও হোটেল খরচ।
চলতি বছর সরকার হজযাত্রীদের জন্য দুটি স্বতন্ত্র প্যাকেজ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে হারাম শরিফ থেকে দেড় থেকে আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
রিয়ালের দাম ২ টাকা বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খরচ কমাতে সমুদ্র ভ্রমণ
হজ খরচের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিমান ভাড়া হওয়ায় হোসেন বলেন, সরকার সৌদি আরবে একটি সমুদ্র পথ খুঁজছে। যা হজযাত্রীদের ভ্রমণ ব্যয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।
'জাহাজে যেতে সময় বেশি লাগবে। আসা-যাওয়া মিলে ১৪ থেকে ১৬ দিন লাগতে পারে। ইমিগ্রেশন, সমুদ্রপথে নিরাপত্তা, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে। নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীর সঙ্গেও আমাদের আলোচনা করতে হবে,' বলেন তিনি।
তবে তিনি বিভিন্ন লজিস্টিকাল চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও উল্লেখ করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রগামী বড় জাহাজের প্রয়োজনীয়তা, যা বর্তমানে দেশে নেই।
প্রয়োজনীয় জাহাজ ১ কোটি টাকার বরাদ্দে ইজারা দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য সহযোগিতা নিতে বাংলাদেশের বৃহত্তম জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকলেও হোসেন এই উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, 'হজের জন্য সমুদ্রপথে ভ্রমণের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে এবং আমরা আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে এই ক্ষেত্রটি উন্মুক্ত হবে।'
তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, সমুদ্র যাত্রায় প্রায় ১৬ দিনের যাওয়া ও আসার ভ্রমণে উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং জাহাজে অভিবাসন, সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।
অনিয়ম মোকাবিলা
স্বচ্ছতা ও সম্ভাব্য অনিয়মের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, 'হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান, যেকোনো ধরনের প্রতারণা বা অসদাচরণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সরকারি অর্থায়নে হজ কর্মসূচিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে খালিদ হোসেন বলেন, 'ইতোপূর্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ফ্রি হজ করার জন্য যেতেন। এই প্র্যাকটিসটা আমরা বন্ধ করে দেব।'
তিনি বলেন, 'কোনো লোক আমাদের দায়িত্বের বাইরে হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত নয়। কেবল সরকারি টাকায় হজ করবেন, এই প্র্যাকটিসটা আমরা আগামী বছর থেকে বন্ধ করে দিতে চাই। একেবারে বন্ধ করতে না পারলেও সহনীয় পর্যায়ের নামিয়ে আনতে চাই।'
এই পরিকল্পিত সংস্কারের মাধ্যমে সরকার হজযাত্রাকে আরও সাশ্রয়ী, সুবিন্যস্ত এবং বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য নিরাপদ করার লক্ষ্যে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।