বর্তমান বাস্তবতায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করা সম্ভব না: ফলকার তুর্ককে আইন উপদেষ্টা
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্কের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল জানান, 'আজ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক তাঁর কাছে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করা যায় কি-না সে বিষয়ে মি. তুর্ক কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে আমি বলেছি, এটা বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব না। কারণ আমাদের পেনাল সিস্টেম ও শত বছরের জাস্টিস সিস্টেমে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যে ফ্যাসিস্টদের হাতে হাজার হাজার তরুণ নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার বিচারকে সামনে রেখে হঠাৎ করে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া যেকোন বড় ধরণের আইনগত পরিবর্তন সমাজের আকাঙ্খার সঙ্গে মিল রেখে করতে হয়।'
আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচারকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন আইনগত সংস্কারে জড়িত রয়েছে। এছাড়া ফরেনসিক সাপোর্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট বা ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়েও সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
ফলকার তুর্ক-কে আশ্বস্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, এই ট্রাইব্যুনালে সুবিচার করা হবে। প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা থেকে এটা করা হচ্ছে না। অবিচার করার জন্য আগের আদালতে যেরকম হয়েছে, সেরকম অবিচার করা হবে না। এখানে কোন কিছু লুকানোর নেই। যে-কেউ এসে এই বিচার দেখতে পারবেন।
এসময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত দলগুলোর নির্বাচনের যোগ্যতা নির্ধারণে জনগণের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল বলেন, 'এটা আমার বলার জায়গা না। এখন আপনি যদি মনে করেন, যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, আরও চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার মানুষকে অঙ্গহানি ঘটিয়েছে, চোখ কেড়ে নিয়েছে, এখনো তারা সেই অপকর্মের পক্ষে কথা বলে।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি ফাঁস হওয়া রেকর্ডটা সঠিক হয়, তাহলে এখনও তাদের নেত্রী ২৮৭ জনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। অন্য দেশে বসে সন্ত্রাসী হুমকি দিচ্ছে, যিনি একটা গণহত্যার মামলার আসামি। বিচারের আগে, দায়মুক্তির আগে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাবে আরও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার জন্য? কাজেই সবকিছু একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসবে।'
আসিফ নজরুল বলেন, 'একটা গণহত্যা চালানোর পর এখনও একটা দল বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমাদের এত বড় আন্দোলনের নেতাদের কিশোর গ্যাং বলার চেষ্টা করে, আরও মানুষকে হত্যা করার হুমকি দেয়, সেই দলের রাজনৈতিক অধিকার থাকা উচিত কি না, তা প্রতিটি মানুষই বিবেচনা করবেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দেখা যাবে।'
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সব দেশেই মৃত্যুদণ্ড রহিত করার কথা বলে জাতিসংঘ। তাদের একটি অপশনাল প্রটোকল আছে। ওই প্রটোকলের মূলকথাই হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড রদ করার জন্য। কিন্তু পৃথিবীর খুব অল্প দেশেই মৃত্যুদণ্ড রদ করেছে। এটা তাদের অঙ্গীকার থেকে বলবেই। কিন্তু আমাদের যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম, আমাদের যে জুডিসিয়াল কালচার আছে, সেগুলো তো আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। মৃত্যুদণ্ড রহিত করার যে অপশনাল প্রটোকল রয়েছে, আমাদের কোনো সরকারের পক্ষ থেকেই এই অপশনাল প্রটোকলের পক্ষরাষ্ট্র হওয়ার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, 'তাদের বলেছি, আমাদের আইনগত যে সংস্কার, সেটাতে তারা জড়িত আছেন, প্রতিষ্ঠানিক সংস্কারে আমাদের যদি ফরেনসিক সহায়তা লাগে, সেটা তারা দেবেন। আমরা এখানে সুবিচার করব, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিচার করছি না।'