হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করতে আইজিপিকে চিফ প্রসিকিউটরের চিঠি
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. মাইনুল ইসলামকে অনুরোধ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) আইসিটি প্রসিকিউশন টিমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে আইজিপিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করার জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার আসামি শেখ হাসিনাসহ সব পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। পলাতক আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, "খুব দ্রুত ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হবে। বিশ্বের যেখানেই এই পলাতক ফ্যাসিস্টরা লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আদালতে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।"
১৭ অক্টোবর দুটি পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা ও আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার মধ্য দিয়ে নবগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) কার্যক্রম শুরু হয়।
মামলাগুলো চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের সময় ঘটে যাওয়া গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সকল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পরবর্তী শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে (১৮ নভেম্বর) আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনার পুত্র ও সাবেক আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (তিনি ইতোমধ্যে একটি হত্যা মামলায় পুলিশের হেফাজতে আছেন) এবং লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
আদালত তদন্তের স্বার্থে অন্য নামগুলো প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তদন্তের সুবিধার্থে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সকল নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সরকার ও তদন্ত সংস্থার সরবরাহকৃত প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত সহিংস গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
১৭ অক্টোবর পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গণহত্যার অভিযোগে মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মন্ত্রিসভার সদস্য, জোটভুক্ত দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদেরকেও এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
৪ নভেম্বর পর্যন্ত আইসিটির প্রসিকিউশন টিমের কাছে মোট ৮০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড; গত ১৫ বছরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, যেমন গুম এবং ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে কথিত গণহত্যা।