মিয়ানমার সাংঘাত: ওপারে আবারও মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ; এবার আরাকান আর্মির বিপক্ষে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ঘিরে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকায়। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত মংডু থেকে আসা বিকট শব্দে টেকনাফ পৌর, হ্নীলা, সদর ও সাবরাং এলাকার মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।
সর্বশেষ ৩ নভেম্বর এমন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল।
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বিমান থেকে বোমাবর্ষণ চালালেও স্থলে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে কিছু সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, দিনের পাশাপাশি রাতে যুদ্ধবিমানের চক্কর এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। টেকনাফ পৌরসভা, হ্নীলা, সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, মংডু শহরের আশপাশের উকিলপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সুধাপাড়া, নাপিতের ডেইল, নয়াপাড়া, সিকদারপাড়া ও হারিপাড়া এলাকা থেকে এসব শব্দ আসছে।
সাবরাং আছারবনিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাবের বলেন, এত শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ আগে কখনও শোনা যায়নি। ফজরের নামাজের সময় একটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো মসজিদ কেঁপে উঠেছিল।
শাহপরীর দ্বীপের গণমাধ্যমকর্মী জসিম মাহমুদ জানান, নয় মাস ধরে সীমান্ত এলাকার মানুষের চোখে ঘুম নেই। দিনের সময় তেমন আতঙ্ক না থাকলেও রাত হলেই দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, 'মিয়ানমারের সমস্যার কারণে বাংলাদেশের সীমান্তের বাসিন্দারা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যুদ্ধ বিমানগুলো এত নিচু দিয়ে উড়ে যায় যে, মনে হয় তারা আমাদের আকাশসীমা অতিক্রম করছে।'
হ্নীলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, নাফনদীর জালিয়ার দিয়া ও লাল দিয়া নামে দুটি চরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী দুটি গোষ্ঠী অবস্থান করছে। সেখানে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে এবং মংডু শহর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
হ্নীলার ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে সাবরাং এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। এর ফলে শিশুরা এবং বয়স্করা খুবই বিপাকে পড়ছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও এর প্রভাব সীমান্তের বাসিন্দাদের ওপর পড়ছে। 'অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।'
সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো এখন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়েছে। গত ৮ নভেম্বর তাদের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের নির্মম শিকার রোহিঙ্গারা বর্তমানে আরাকান আর্মির নিপীড়নের মুখে রয়েছে। আরাকান আর্মির দ্বারা রোহিঙ্গা নির্যাতনের মাত্রা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রোহিঙ্গারা মনে করেন, মংডু শহর তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং চেতনার প্রতীক। সুলতানি আমলে আরব বণিকদের আগমনের মাধ্যমে এ শহরে ইসলামের প্রসার ঘটে। কিন্তু বর্তমানে শহরটি আরাকান আর্মির দখলে।