সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা জনগণ মেনে নেবে না: তারেক রহমান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকার পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা দেখতে পেলে জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'মাফিয়া সরকারের তৈরি করা জঞ্জাল তিন মাসে দূর করা সম্ভব না। আবার তিন মাস পরে সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক নয়। তবে সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা দেখতে পেলে জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না।'
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে (আইইবি) জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) ৩য় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জেটেব আহ্বায়ক ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান।
প্রত্যক্ষ গোপন ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন ফখরুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এ কে এম রুহুল আমিন আকন্দ।
তারেক রহমান বলেন, 'সংস্কার কাজ করতে গিয়ে অগ্রাধিকারের সেটিংস যদি ভুল হয়, তাহলে জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবেই সেটি বিবেচিত হবে।'
তিনি বলেন, 'দুদিন আগে [জুলাই আন্দোলনে] আহতরা হাসপাতাল থেকে যেভাবে বের হয়ে এসেছেন, সেটা আমাদের বিবেকবান প্রত্যেকটা মানুষের জন্যই লজ্জাজনক। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেন অগ্রাধিকার তালিকায় নেই? থাকলেও কত নম্বরে ছিল?'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী সরকার দেশকে আমদানি নির্ভর, পরনির্ভর ও ঋণনির্ভর করেছে। এমন অবস্থা থেকে দেশকে বের করে আনা প্রয়োজন।'
তৈরি পোশাক খাতকে আরও লাভজনক ও বিশ্ববাজারে চাহিদা তৈরিতে বিএনপি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়িয়ে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর বিষয়টিও বিএনপির বিবেচনাধীন।'
তিনি আরও বলেন, 'একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ন হয়, তাহলে অর্থনীতিও রুগ্ন হতে বাধ্য। স্বৈরাচারী আমলে আমরা সেটাই দেখেছি। উন্নয়নের নামে মেগাপ্রজেক্টের আসল রূপ এখন বের হয়ে আসছে।'
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি ভবিষ্যত বাংলাদেশের উন্নয়নে ঐতিহাসিক সনদ। মানসম্পন্ন ও প্রায়োগিক শিক্ষার ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যা কোনও অভিশাপ নয়; বরং জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করা গেলে দেশের উন্নয়নে তা হবে বড় শক্তি।
'আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করছে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ পরিবেশে ভোট দিতে সক্ষম হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করছে, তা বুঝতে পারলে জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক দৃঢ় হবে,' বলেন তিনি।
দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার লক্ষ্য উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, 'জনগণের জীবনযাত্রাকে একটু ভাল করা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভাল করা, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা, মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা ভাল করা এবং নিরাপত্তা ভাল করা—এটাই আমাদের লক্ষ্য।'
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার কাজ করছে, আমরা তাদের সমর্থন করি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা করবেন।'
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মিনহাজুর রহমান, এবং সদস্য সচিব এ বি এম রুহুল আমিন আকন্দসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।