বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বহুমুখী, এক এজেন্ডায় সীমাবদ্ধ রাখা যায় না: হাইকমিশনার
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বহুমাত্রিক এবং এটিকে একটি এজেন্ডায় সীমাবদ্ধ রাখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্মা দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এ মন্তব্য করেন।
এসময় তিনি বলেন, 'অস্থিতিশীল পরিবর্তন সত্ত্বেও আমাদের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, আমাদের যোগাযোগ ও জ্বালানি সংযুক্তি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পৃক্ততা ইতিবাচক ধারা বজায় রেখেছে। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের সম্পর্ক সত্যিকার অর্থেই বহুমুখী এবং একে কোনো একটি ইস্যুতে সীমাবদ্ধ করা যায় না।'
ভার্মা বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল ও গঠনমূলক সম্পর্ক জোরদারে ভারতের অব্যাহত অঙ্গীকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। আমরা এমন একটি সম্পর্কের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব, যেখানে মূল অংশীজন হবে দুই দেশের জনগণ।
ভারত ও বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ও সক্ষম। আমরা এখন একে অপরের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা সম্পন্ন দুটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজ হিসেবে আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে আরও জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ কেবল ভারতের 'প্রতিবেশী প্রথমে' নীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভই নয়, এটি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, দ্য সাগর (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) ডকট্রিন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনেরও কেন্দ্রবিন্দু।
তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক জোট এবং আঞ্চলিক একত্রীকরণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে অভিহিত করেন।
বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী পঞ্চম বৃহত্তম।
তিনি বলেন, ভারত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশ থেকে সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আরও বেশি রপ্তানি সম্ভব হয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের বাংলাদেশে রপ্তানি করা অনেক পণ্যই বাংলাদেশি শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ এবং মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভার্মা বলেন, অংশীদারত্বের মাধ্যমে উভয় পক্ষের সাধারণ জনগণের উপকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তিনি ১৯৬৫-পূর্ববর্তী রেলসংযোগ, কাস্টমস চেকপয়েন্টগুলোর আধুনিকীকরণ এবং সমন্বিত চেকপোস্টগুলোতে নতুন অবকাঠামোর উদাহরণ তুলে ধরেন, যা মালবাহী পরিবহন ও যাত্রীদের সুবিধার্থে সহায়ক হবে।
তিনি আসাম থেকে বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত ডিজেল পাইপলাইন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনসহ জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর উদাহরণও তুলে ধরেন।
এছাড়া, তিনি ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনকে আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
আঞ্চলিক অর্থনীতি তৈরির জন্য যোগাযোগকে কাজে লাগানোর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে ভার্মা বলেন, ভারতীয় বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে ট্রান্সশিপমেন্ট হাবের মতো উদ্যোগ বাংলাদেশি রফতানিকারকদের বিশ্ববাজারে তাদের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য সাশ্রয়ী সুযোগ দিয়ে থাকে।