গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ-অগ্নিসংযোগে আহত ৫
গাজীপুরে এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো আজ সোমবারেও বিক্ষোভ করছেন। আজ সোমবার সকালে নগরীর সারাবো এলাকায় তারা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। এতে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক, যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।
এদিকে শ্রমিকদের এ আন্দোলনের জেরে নিরাপত্তা ও অন্যান্য কারণে আশ-পাশের অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে পানিশাইল এলাকায় অবস্থিত একটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে দুটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আশ-পাশের লোকজন সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে নিলে শ্রমিকরা তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উত্তেজিত শ্রমিকেরা জিরানি বাজারের পাশেই অ্যামাজন নীট নিটিং নামের একটি কারখানায় আগুন দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সর্ভিসের দুটি ইউনিট বেলা দেড়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা এক মাসের (অক্টোবর) বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
গত বৃহস্পতিবার একই দাবিতে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। পরদিন শুক্রবার কর্মসূচি না করলেও শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পুনরায় তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। রাতে সড়ক ছেড়ে দিলেও পরদিন রোববার থেকে কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
সূত্র আরো জানায়, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভেতরের কারখানাগুলোর মালিক শেখ হাসিনার সাবেক শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের বেতন সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। প্রতিমাসেই শ্রমিকরা আন্দোলন করে বেতন আদায় করছেন।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানায় ৪১ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি মাসের তাদের বেতনের পরিমাণ ৮০ থেকে ৮২ কোটি টাকা। প্রতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে তাদের বেতন দেওয়া হতো। কিন্তু কারখানার শ্রমিকেরা অক্টোবর মাসের বেতন এখনো পাননি। এ কারণে তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন শুরু করেন।
আরও জানা গেছে, আজ সকালে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করলে আশ-পাশের অন্তত ২০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ১ নভেম্বর পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। গতকাল রোববার কারখানা খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পরই কারখানা ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। সোমাবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা দেখেন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ওই নোটিশ দেখে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে শুরু করেন একদল শ্রমিক। একপর্যায়ে তারা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। একই সময়ে ওই সড়কের পৃথক স্থানে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরাও বিক্ষোভ করছিলেন।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। একপর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকেরা।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসে উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, খবর পেয়ে কাশিমপুর দমকল বাহিনীর দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দুটি কারখানার বিক্ষুব্দ শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সড়কে অবরোধ থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।