জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকশার ধাক্কায় ছাত্রীর মৃত্যু: ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারি-চালিত রিকশার ধাক্কায় শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর ঘটনায় এস্টেট অফিসের প্রধানসহ ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অনুমোদনহীন বেপরোয়া অটোরিকশা চলাচলের ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এস্টেট অফিসের প্রধান ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বাবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া, সহকারী সুপারভাইজার আব্দুস সালাম ও সিকিউরিটি গার্ড মনসুর রহমান প্রামাণিককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রশাসন।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাবুলের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অটোরিকশা চলাচলে দায়িত্বে অবহেলা, রিকশার লাইসেন্স বিক্রি ও নিয়মিত তদারকি না করার অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে বাবুলসহ দায়িত্বে থাকা সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্তের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মঙ্গলবার মধ্যরাতেই ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমানের হাতে লেখা এক অফিস আদেশে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার (২০ নভেম্বর) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।
পরে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ২০ নভেম্বর শোক দিবস ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ বুধবার শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে; অর্ধনমিত রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা।
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি
এদিকে, আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর পর ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে আল্টিমেটাম দিয়েছে তারা। মঙ্গলবার মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিলে তারা এসব দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- তিন কর্ম দিবসের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে; ২৬ নভেম্বরের মধ্যে অবৈধ লাইসেন্স বাতিল করে বৈধ লাইসেন্সধারীদের জন্য কার্ডসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে; রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে; দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে; পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে মেডিকেল সেন্টারের সার্বিক উন্নয়নের জন্য উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে হবে; হত্যার ঘটনায় যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলা দায়ের করতে হবে; পরিবারের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে; এস্টেট অফিসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ে দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের চিঠি প্রেরণ করতে হবে; নিহত শিক্ষার্থী রাচির নামে হলের নামকরণ করতে হবে এবং হলভিত্তিক ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি রিকশার ধাক্কায় আহত হন আফসানা করিম রাচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাচিকে মৃত ঘোষণা করেন।
আফসানা করিম রাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথমবর্ষের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী এবং বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। তার বাড়ি শেরপুর। ঢাকার গ্রীন রোডের গ্রীন স্কয়ারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) থেকে নতুন কলাভবনের দিকে যাচ্ছিল রিকশাটি। বিপরীত দিক থেকে আরেকটি রিকশা ডেইরি গেটের দিকে যাচ্ছিল। রিকশা দুটি হঠাৎ মুখোমুখি হওয়ায় গতি সামলাতে না পেরে একটি রিকশা রাচিকে ধাক্কা দেয়। রাচি তখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এতে তিনি ছিটকে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খান। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার সবুজ জানান, "সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাকে এনাম মেডিকেলে আনা হয়। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।"
আফসানা রাচির সহপাঠী কানিজ ফাতেমা বলেন, "রাচি আজ বিকেলে একাই হাঁটতে বের হয়েছিল। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছি। মাত্র এক মাস আগে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, "আমরা ইতোমধ্যে সিসিটিভি দেখে রিকশাচালককে শনাক্ত করেছি। আমরা অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেব।"