পাতানো নির্বাচন করায় কমিশনারদের বিচারের সুপারিশ এসেছে সংস্কার কমিশনে
বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচন আয়োজন করে বিগত নির্বাচন কমিশনাররা শপথ ভঙ্গ করেছেন। সংস্কার কমিশনে সেসব কমিশনারদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব এসেছে।
আজ রোববার নির্বাচন কমিশনে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আগের নির্বাচন কমিশনগুলো বিতর্কিত ও কলঙ্কজনক নির্বাচন করেছেন। এর মাধ্যমে তারা শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব এসেছে। প্রায় সবাই এই প্রস্তাব করেছে।
এছাড়া আলোচনায় উঠে আসা অন্যান্য প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, "আজকে সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ। সবাই শিক্ষক ছিলেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এদের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকার বিষয় মতামত প্রকাশ করেছেন। এতে কেউ দ্বিমত করেনি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার কথা এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে, এমন প্রস্তাব এসেছে। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অধীনে একটি আলাদা সরকার হতে হবে।
অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে অনেকেই রাষ্ট্রপতি সরাসরি নির্বাচনের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতির পদ আরও শক্তিশালী করতে বলেছেন। নারীদের সরাসরি নির্বাচন এবং তাদের নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থাকতে হবে, আসন থাকতে হবে, এমন প্রস্তাব এসেছে।
পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের আইন পরিবর্তন করার কথাও এসেছে, যোগ করেন বদিউল আলম।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, সংরক্ষিত আসনে নারীদের দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব হয় না। তারা এখানে সম্মানবোধ করে না। তার নিজের কোন এলাকা নেই তাই দায়বদ্ধতাও নেই।
তিনি বলেন, "এজন্য নারীদের আসন ১০০ টি করে, সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া সমাজের আরো যে-সব অংশ আছে সংখ্যালঘু, আদিবাসী জনগণ, শ্রমিক শ্রেণি, কৃষক শ্রেণি, সমাজের শিক্ষার্থীরা, তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।"
আরেক অংশগ্রহণকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, "আমরা গোটা জাতির জন্য একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে চাই। গণতন্ত্রে নির্বাচনই হচ্ছে একটি নিয়ামক। এই নিয়ামক যেন যথার্থভাবে ও টেকসই হয় সে বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে।"
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থায় না ভোট রাখাসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। এছাড়া সবাই অংশগ্রহণকারী অনেকেই আনুপাতিকারে নির্বাচনে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
প্রার্থীদের মধ্যে কাউকে পছন্দ না হলে যেন 'না ভোট' দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নির্বাচনে কারও প্রতি অন্যায় হলে তিনি মামলা করেন। সেই মামলা নিষ্পত্তি হতে হতে টার্ম (নির্বাচনের নির্দিষ্ট মেয়াদ) চলে যায়। তখন ওই লোক বিচার পান না।
তিনি প্রস্তাব দেন যে, নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটা বিচারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যাতে করে নির্বাচন কমিশনই দ্রুততার সঙ্গে সেটার বিচার করতে পারে এবং ওই লোক বঞ্চিত না হয়। ভুক্তভোগী তার অধিকার ফিরে পেতে পারে।
আরেকটি প্রস্তাব তুলে ধরার সময় ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিগত সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) নানা কিছু কিনে অনেক টাকা তছরুপ করেছে। যার কারণে সাধারণ মানুষের নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা থাকে না। স্বচ্ছতা কীভাবে নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আনা যেতে পারে, সেটার ব্যবস্থা করেন। নাহলে জনগণের আস্থা ফেরত আসবে না। নাহলে মনে করবে এরাও আগের মতোই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, সভায় আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মত এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা মিশ্র পদ্ধতিতে আসা উচিত। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করা, স্বচ্ছভাবে দলীয় অর্থায়ন করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব অংশীজনের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা থাকার কথাও সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, সভায় নির্বাচনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং না ভোটের প্রসঙ্গও এসেছে।