সংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ নেই, তবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। তবে বিএনপি একটি 'যৌক্তিক সময়ের মধ্যে' নির্বাচন প্রত্যাশা করে।
'সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে... যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন,' বলেন তারেক রহমান।
তিনি আরও বলেন, 'বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন।'
সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। বিতাড়িত স্বৈরাচার আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই মধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।'
সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির মনোভাব জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম... এটি কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।'
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তকে 'গুরুত্বপূর্ণ ধাপ' বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন।'
তারেক বলেন, 'তবে সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্যকর।'
সংস্কার কার্যক্রমকে কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার মন্তব্য করে তারেক বলেন, 'জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।'
বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপরে গুম-হত্যা-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'শহীদদের আকাঙ্ক্ষার একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব।'
তারেক রহমান বলেন, ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বিএনপি। বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এবং অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।
সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যেকোনো মানুষের মধ্যেই যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ইস্যুতে দ্বিমত ভিন্নমত থাকবে, থাকতেই পারে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য।'
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।