পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে
সুপ্রিম কোর্ট থেকে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগীয় রোডম্যাপের বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট হতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ওই প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের উদ্দেশ্যে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশের খসড়া, প্রস্তাবিত সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং সম্ভাব্য সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, সংবিধানের ৪র্থ তফসিলের অন্তর্গত 'অন্তবর্তীকালীন ও সাময়িক বিধানাবলি'র দফা ৬(৬) অনুযায়ী অধস্তন আদালত সম্পর্কিত সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের ২য় পরিচ্ছেদের বিধানাবলি যথাশীঘ্রই সম্ভব বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।'
তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারকগণের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপে অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। বদলি ও পদায়ন নীতিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে তা সম্পর্কে সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকগণের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি পত্র দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন আদালতসহ সব ট্রাইব্যুনালে গত ৩ নভেম্বর পাঠানো হয়েছে।
খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে অধস্তন আদালতের বিচারকগণের মতামত গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় এবং মতামত গ্রহণের সুবিধার্থে খসড়া নীতিমালাটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালত হতে মোট ৫২টি মতামত পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।
ঘোষিত রোডম্যাপের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
এসব ছাড়াও প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে যে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তা বিশ্লেষণ করে অধ্যাদেশের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এছাড়া খসড়ায় উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রস্তাবিত জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল সম্পর্কে বিচারপতিদের ১৮টি লিখিত মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির সার্বিক তত্ত্বাবধানে মতামতগুলো নিরীক্ষাপূর্বক খসড়া অধ্যাদেশটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের সেবা সহজিকরণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন বিচারপতি। তার উপস্থিতিতে ১২ দফা বাস্তবায়নে সুপ্রমি কোর্ট রেজিস্ট্রির বিভিন্ন শাখার গৃহীত পদক্ষেপ ও দাখিলকৃত অগ্রগতি প্রতিবেদন আজ মূল্যায়ন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া কোর্টে আগত কোনো সেবাগ্রহীতা কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে তাদের জন্য একটি হেল্পলাইন নাম্বার (+৮৮ ০১৩১৬১৫৪২১৬) চালু করা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতিরেকে প্রতি রোববার হতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ হেল্পলাইন চালু থাকে।
এ পর্যন্ত হেল্পলাইন নাম্বারে আইনি পরামর্শ, মামলা সম্পর্কিত তথ্য ও অভিযোগ দাখিল সংক্রান্ত মোট ৭২৩টি কল গ্রহণ করা হয়েছে। ৪২৬টি কলের মাধ্যমে আইনি পরামর্শ, ২৪৩টি কলের মাধ্যমে বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম, কাজে অবহেলা, সেবা প্রাপ্তিতে বিলম্ব ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ৪২টি কল গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হলেও এ সংক্রান্ত রিভিউ দরখাস্তটি অনিষ্পন্ন ছিল। গত ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগ বিষয়টি নিয়ে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরায় কাজ করা শুরু করে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ইতোমধ্যে কাজ করছে।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংক্রান্ত রোডম্যাপের আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কার্যক্রমসমূহ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়ন এবং বিচার বিভাগের কার্যকর পৃথকীকরণের মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।