দেড় লাখ টন চাল, টিসিবির জন্য ১৫৬ কোটি টাকার ডাল-চিনি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন আতপ চাল এবং ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই দেড় লাখ টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ৮৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত দুইটি প্রস্তাবসহ আরও কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে জিটুজি (সরকার টু সরকার) পর্যায়ে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন থেকে খাদ্য অধিদপ্তর এ চাল কিনবে। এক্ষেত্রে প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৫১৫ ডলার। এই চাল আনতে মোট ব্যয় হবে ৬১৮ কোটি টাকা।
আরেকটি প্রস্তাবে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশটির মেসার্স মন্ডল স্টোন প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এ চাল কিনবে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রতি টন চালের দাম পড়ছে হয়েছে ৪৬৭ দশমিক ৭০ ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
কোনো ক্রমেই যাতে ঘাটতি না দেখা দেয়, তাই খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়াতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জি টু জি (সরকারের টু সরকার) পদ্ধতিতে ৬ লাখ টন খাদ্যশস্য ২ লাখ চাল এবং ৪ লাখ টন গম আমদানি করা হবে। এই চাল ও গম আমদানির সময়সীমা ৪২ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে দেশের দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার টন চিনি ও মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ৫৯ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ৫ হাজার টন চিনি কেনা হবে। প্রতি কেজি চিনির দাম ধরা হয়েছে ১১৮ টাকা ৪৩ পয়সা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবে, চট্টগ্রামের মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি ৯৬ টাকা ৬৯ পয়সা দরে এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
৬০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৩০ হাজার টন রক ফসফেট আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়। এতে ব্যয় হবে ৩৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানি হবে। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার ১০০ ডলার; অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩৩ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম পড়ছে ৩৬৯.৬৭ ডলার।
সৌদি আরবে সাবিক এগ্রি থেকে ৩০ হাজার বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। প্রতি টন ৩৪২.৩৩ ডলার দরে এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের টিএসপিসিএল-এর জন্য ৩০ হাজার টন টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড ও রক ফসফেট আমদানি হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
বৈঠকে দুইটি প্যাকেজে 'সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ'-এর ক্রয় প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের (পুনঃটেন্ডার) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পৃথক দুটি প্যাকেজে প্রকল্প দুইটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৮৬১ টাকা।