বিচারিক দক্ষতা কেবল প্রশাসনিক লক্ষ্যই নয়, নৈতিক বাধ্যবাধকতাও: প্রধান বিচারপতি
সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের দায়িত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগে দক্ষতা একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা, এটি শুধু প্রশাসনিক উদ্দেশ্য নয়।
আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'এ ভূমিকা কেবল নেতৃত্বের একটি অবস্থান নয়, বরং সবার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা সমুন্নত রাখা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে জনগণের পক্ষ থেকে বিচারকদের প্রতি অর্পিত একান্ত আস্থা।'
সংবিধানে স্বাধীন বিচার বিভাগের কথা বলা হলেও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিচার বিভাগের কার্যকর পৃথকীকরণের বিষয়টি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ জানান, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে জনগণের সেবা করার জন্য বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে তিনি গত ২১ সেপ্টেম্বর একটি বিস্তৃত 'বিচার বিভাগীয় সংস্কারের জন্য রোডম্যাপ' প্রকাশ করেছেন। এসব সংস্কারের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, নির্বাহী বিভাগের সত্যিকারের আলাদা করে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও মেধাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
বিচারিক পদে ন্যায্যতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জেলা জজদের জন্য পদায়ন ও বদলির নির্দেশিকা প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ড. রেফাত।
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ মামলা নিষ্পত্তির পর আমরা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল ও শক্তিশালী করেছি। এ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপট সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের জন্য সংসদের বিধানকে কার্যকরভাবে সরিয়ে দেয়, বিচার বিভাগকে অযৌক্তিক রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।'
সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লেখ করেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি দপ্তরকে ১২ দফা নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে নিষ্কলঙ্ক আচরণবিধি বজায় রাখা, দুর্নীতি নির্মূল, দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান এবং সবার জন্য ঝামেলামুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা।
মামলার অনিষ্পত্তি, বিলম্ব এবং পদ্ধতিগত অদক্ষতার কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে তিনি সচেতন রয়েছেন বলেও জানান।
এসব রূপান্তরমূলক উদ্যোগ অর্জনে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, 'ইউএনডিপির মতো উন্নয়নশীল অংশীদারগুলো বিচার বিভাগের অনন্য চাহিদা অনুযায়ী সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও নীতি উন্নয়নে সহায়তাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।'
তিনি বলেন, 'আমি এমন এক বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখি যা জবাবদিহির একটি মডেল হিসেবে কাজ করে, যেখানে প্রত্যেক মামলাকারী তাদের অবস্থা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে এ নিশ্চয়তা পাবে যে তাদের মামলার শুনানি হবে এবং নিরপেক্ষভাবে নিষ্পত্তি হবে। আমি এমন এক বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখি যা আইনি ব্যবস্থা ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দেবে এবং প্রযুক্তি, আইনি সহায়তা এবং পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়বিচারকে আরও সহজ করে তুলবে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলিয়ার সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের যে রোডম্যাপ প্রবর্তন করেছেন, তা একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।