২০২১ সালে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় যা ছিল
বিগত সরকারের সময়ে অপপ্রয়োগের কারণে 'ডেথ স্কোয়াড' হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাব। এলিট ফোর্সটিকে বিরোধীমত দমনে – গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর র্যাবকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আজ (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
আওয়ামী সরকারের সময়ে এক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় এই বাহিনী এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন রাজস্ব বিভাগ, আর কিছু দেয় পররাষ্ট্র দপ্তর।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছয়জনই ছিলেন র্যাবের সাবেক ও তৎকালীন মহাপরিচালক বা অতিরিক্ত মহাপরিচালক। যেমন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসেন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান।
২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে র্যাবের একজন অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদকেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সরকারের এক নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ আদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথা বলা হয়েছে।
রাজস্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবকে একটি বিদেশি সংস্থা হিসেবে মার্কিন সরকারের নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) অধীনে রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে র্যাবও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগনিটস্কি আইনের অধীনে নির্বাহী আদেশে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ওই আইনের আওতায় মার্কিন সরকার দুর্নীতি কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বিদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।
রাশিয়ার আইনজীবী সের্গেই ম্যাগনিটস্কির নামে এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে তিনি রাশিয়ায় একটি কারাগারে বিচারের আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
মার্কিন রাজস্ব বিভাগের নিষেধাজ্ঞা
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (ওফাক) র্যাবকে একটি বিদেশি সত্ত্বা (বাহিনী) বলে উল্লেখ করে, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, নয়তো এরজন্য দায়ী।
ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এর নিষেধাজ্ঞায় আসা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে কোনো আর্থিক সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক ও কোম্পানি, অথবা দেশটিতে বসবাসকারী কেউ – এসব ব্যক্তির সাথে কোনো লেনদেন করতে পারে না।
ওফাক র্যাবের তৎকালীন ডিজি মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এদের মধ্যে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল র্যাবের ডিজি হন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আর ২০২১ সালের ১৬ মার্চে নিজ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আজাদ।