নারী নির্যাতন বন্ধ ও সমতা প্রতিষ্ঠা করতেও পুষ্টিকর খাবার জরুরি: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও সুস্থ থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
আজ রোববার রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কক্সবাজারে 'জেলা পর্যায়ে বহুখাত ভিত্তিক পুষ্টিসেবা বাস্তবায়নে সুযোগ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধকতা' শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল এবং দৈনিক সমকালের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, নারীর মুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারীদৈর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলে গেছেন। আর সেই খাদ্য যদি পুষ্টি নিশ্চিত হয় তবেই প্রকৃত অর্থে নারীর স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া যাবে। নারী নির্যাতন বন্ধ ও সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলেও পুষ্টিকর খাদ্য জরুরি।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার যতদিন দায়িত্বে থাকবে ততদিন কোন সীমাবদ্ধ থেকে কোন কাজ করতে চাইনা মন্তব্য করে ফরিদা বলেন, নারীদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। নারীরা নিজেরা সচেতন না হলে তা পুষ্টি নিশ্চিত করা যাবে না। গ্রাম পর্যায়ে নারীরদের হাঁস মুরগী পালনে সহায়তা, গরু পালনে সহায়তা জরুরি। নারীরা নিজেরাই খাদ্যের যোগানদাতা হলেই নিজের খাদ্য নিশ্চিত করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত নারীর চেয়ে গবীর নারী সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।
আমাদের দেশে দেশীয় মাছের বৈচিত্র্যতা, গবাদি পশু মুরগি, গরু, ছাগলের প্রজাতির বৈচিত্র্য রয়েছে মন্তব্য করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আগে খাদ্যের সংজ্ঞা বদলানো জরুরি। মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের সহায়তা হিসেবে কেবল চাল দেয়া হয়। শুধু চাল কি খাদ্য। চালের সাথে অন্যান্য উপদান কোথায়। যদিও এই সরকার আগে ২৫ কেজি চালের পরিবর্তে ৪০ কেজি চাল প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু চালের সাথে খাদ্য তালিকার অন্যান্য কিছু জোগান কে দেবে।
দেশের প্রতিটি মানুষের টেকসই পুষ্টিসেবা ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার এমন কথা মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষুধা নিবারণের জন্য পরিমাণগত উৎপাদন করতে গিয়ে নানা বির্তক তৈরি করেছি। আমরা মাছ আগে নাকি ফিড আগে, গরু ঘাস খাবে কি ভিন্ন কিছু এমন সমস্যার বেড়াজালে রয়েছি। এর থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের একজন কাজ করতে হবে।
দৈনিক সমকালের অনলাইন ইনচার্জ গৌতম মন্ডলের সঞ্চালনায় বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ বলেন, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল গত ৩২ বছরের প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশে কাজ করছেন ২৮ বছর ধরে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সাথে কাজ করেন আলাদা কোনো প্রকল্প নেন না। কক্সবাজারে মডেল হিসেবে চলমান পুষ্টি নিয়ে 'আমান' প্রকল্পটি ৬৪ জেলায় চালু করার দাবিও জানান তিনি।
আমান প্রকল্পের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইফতেয়ার জেরিন। তিনি জানান, ১০ টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়নে নারীদের পুষ্টিকর খাবার বিষয়ে জ্ঞান প্রদান, দক্ষতা বাড়ানোর কাজটি করছে সংস্থাটি।
পুষ্টিবিদ ড. মহসিন আলী বলেন, দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। মানব উন্নয়নের মূলভিত্তি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। আর সেই দুইটির এক উৎস পুষ্টি। এই পুষ্টিকে আরও গুরুত্ব দেয়া জরুরি।
বৈঠকে জাতীয় পুষ্টি কাউন্সিলের মহাপরিচালক মো মাহবুবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক প্রিম রিজভী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব) মো মনির হোসেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: আসিফ আহমেদ হাওলাদার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: বদরুজ্জামান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড বিমল কুমার প্রামাণিক, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. এ এম খালেকুজ্জামান, ব্র্যাকের স্বা্থ্য প্রকল্পের জ্যৈষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাইকা মির্জা, এফএইচ ৩৬০ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইহা মির্জা, জাতীয় পুষ্টিসেবার পরিচালক আনজুমান আরা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী টুম্পা মনি তার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর লেখা পড়ায় ফেরার গল্প উপস্থাপন করেন। তিনি ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ইচ্ছা পোষক করেন। তার লেখা পড়ার সহায়তার আশ্বাসও দেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।