‘ভল্টে ঢুকে টাকা লুট করার চেষ্টা করছিল’: রূপালী ব্যাংক ডাকাতি চেষ্টার ৪ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস বর্ণনা
আজ দুপুরে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া পাকাপুল এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিঞ্জিরা শাখায় ঢুকে পড়ে তিন ডাকাত। শুরুতে কী ঘটছে তা বুঝতে পারেননি ব্যাংকের ভেতরে থাকা গ্রাহক ও কর্মচারীরা।
ডাকাতরা ভেতরে ঢুকেই প্রথমে বন্ধ করে দেয় কলাপসিবল গেইট, এরপর সেখানে থাকা কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখে।
নাম না প্রকাশের শর্তে ব্যাংকের একজন কর্মচারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ডাকাতরা প্রথমেই আমাদের সবার মোবাইল ফোন জমা দিতে বলে। ডাকাতরা সবাই কম বয়সী ও বন্দুকধারী ছিল।'
তিনি বলেন, 'ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্টে ঢুকে সেখানে রাখা টাকা লুট করার চেষ্টা করছিল। এরমধ্যে স্থানীয় মানুষজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাইরে জড়ো হলে তাদের পালানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।'
'আমাদের একজন সহকর্মী কোনোভাবে স্থানীয় একজনকে কল করে জানান, ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে। তিনি ঘটনাটা স্থানীয় মসজিদে জানান। তখন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে। ঘোষণা শুনে স্থানীয়রা এসে ব্যাংকের সামনে জড়ো হন। খবর পেয়ে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চলে আসে।'
এরপর সেনাবাহিনীর সাহায্য চায় পুলিশ। দ্রুতই ব্যাংকটিকে ঘিরে ফেলেন পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যরা। ফলে ডাকাতদের পালানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়।
ডাকাতদের পক্ষ থেকে প্রথম যোগাযোগ
ঘেরাও এর মধ্যে পড়ে প্রথমে ডাকাতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একটি চিরকুট পাঠায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা চিরকুটের মাধ্যমে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। সেই মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে জানান, আলোচনা করে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানো হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক খলিলুর রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে। ভেতরে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি।
ডাকাত দলটির আটক হওয়া তিন সদস্যই কী ব্যাংকে হানা দিয়েছিল, জানতে চাইলে এ র্যাব কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের ভেতরে তিনজন ছিল। বাইরে ওদের লোক ছিল। আটক হওয়া তিনজনের বয়স ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে বলে জানান তিনি।
ডাকাত দলের সদস্যরা জানালা দিয়ে প্রথমে অস্ত্র ফেলে দেয়। একটি বন্দুক জানালা দিয়ে ফেলা হয়। বাকি অস্ত্র ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। পরে একে একে ডাকাত দলের সদস্যরা বের হয়ে। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তিন ডাকাতকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, আত্মসমর্পণকারী ডাকাতরা নিজেদের নাম নীরব, নিলয় ও নিবিড় বলে জানিয়েছে। প্রত্যেকেই মুখে মাস্ক পরা ছিল। ডাকাতরা প্রাথমিকভাবে তাদের যে পরিচয় দিয়েছে, তা নিয়ে র্যাবের সংশয় রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ব্যাংকের ভেতরে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
পরে রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল হাসান জানান, ডাকাতদের কাছ থেকে চারটি খেলনা পিস্তল ও দুটি চাকু উদ্ধার হয়েছে। তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আত্মসমর্পণ করা ডাকাতদের পরিচয় হলো- গোপালগঞ্জের কবির মোল্লার ছেলে মো. লিয়ন মোল্লা নিরব (২২), কেরাণীগঞ্জের মো. কামাল পারভেজের ছেলে মো. আরাফাত (১৬) ও কেরাণীগঞ্জের মো. আব্দুল্লাহর ছেলে মো. সিফাত (১৬)।
তার আগে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ব্যাংকের ভেতর প্রবেশ করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ব্যাংকের ভেতরে থাকা কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে থাকা যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
এসময় ভেতরে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।