‘টিউলিপ সিদ্দিকের বিকল্প বিবেচনা করছে’ যুক্তরাজ্য সরকার: সানডে টাইমস
যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে, তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব কে পাবেন, তা বিবেচনা করা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের জ্যেষ্ঠ সহকর্মীরা। খবর দ্য সানডে টাইমস-এর।
গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যের একটি স্বাধীন তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিউলিপ স্বাধীন তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানোর আগেই তার বিকল্প হিসেবে কয়েকজনের নাম বিবেচনা করা হয়েছে।
কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, টিউলিপের ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এদিকে, ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য দলের সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করার বিষয়টিকে "সম্পূর্ণ অসত্য" বলে দাবি করেছেন। সানডে টাইমস জানিয়েছে, স্টারমারের কিছু ঘনিষ্ঠ লোক আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও, সিদ্দিকের উত্তরসূরি হিসেবে কে আসতে পারেন, তা বিবেচনা করছেন।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস (প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি লিখেছেন টিউলিপ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া একাধিক ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক অপরাধ বিষয়ক কর্মকর্তারা টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সাত সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। সিদ্দিক রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি করতে কোটি কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ করেছিলেন কি না, তা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
র্যাবের মির আহমদ বিন কাসেমের বাড়ি পরিদর্শন টিউলিপ সিদ্দিকের ২০১৭ সালের জিজ্ঞাসাবাদের সাথে সম্পর্কিত বলে দ্য টাইমস নিয়েছে।
ডাউনিং স্ট্রিটের বিবেচনাধীন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন র্যাচেল রিভসের দুই মন্ত্রীর সহকারী এলেস্টেয়ার স্ট্রাথার্ন এবং ইমোজেন ওয়াকার।
অন্য প্রার্থীরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের সংসদীয় ব্যক্তিগত সচিব (পিপিএস) ক্যালাম অ্যান্ডারসন, কনিষ্ক নারায়ণ, পরিবেশ দপ্তরের পিপিএস জশ সাইমন্স এবং রেচেল ব্লেক।
অ্যাটর্নি জেনারেল লুসি রিগবি এবং একজন মন্ত্রীর সহকারী ও অর্থনীতিবিদ তোরস্টেন বেল-ও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
লেবার পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের পদক্ষেপ "এটা নির্দেশ করে যে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করতে প্রস্তুত" এবং তিনি "দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন"।
টিউলিপ সিদ্দিক একাধিক সম্পত্তিতে বসবাসের কারণে চাপের মুখে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে– কিংস ক্রসের কাছে একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট এবং হ্যাম্পস্টেডের একটি আলাদা বাড়ি।
দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) জানিয়েছে, ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন ডলার) দিয়ে কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ নামে একজন ডেভেলপার। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। ২০০৪ সালে কোনো অর্থ না দিয়েই টিউলিপ সিদ্দিক ওই ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছিলেন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দ্য মেইল জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক আগে প্রতিবেদকদের বলেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তার বাব-মায়ের মাধ্যমে কেনা হয়েছিল এবং তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
দ্য সানডে টাইমস পরবর্তীতে জানিয়েছে, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের বোনকে বিনা মূল্যে আরেকটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা মঈন গনি নামের একজন আইনজীবী। হ্যাম্পস্টেডের ওই ফ্ল্যাটে একসময় বসবাস করেছিলেন টিউলিপ।
এছাড়া, ইস্ট ফিঞ্চলেতে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আবদুল করিমের মালিকানাধীন ২.১ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, "আমি স্পষ্ট যে আমি কিছু ভুল করিনি। তবে, সন্দেহ এড়াতে, আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে সত্যতা যাচাই করুন। আমি অবশ্যই নিশ্চিত করব যে আপনাদের এই কাজের জন্য সব তথ্য দিব।"
এখন টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠছে কারণ এক বিরোধী আইনজীবী দাবি করেছেন, যখন টিউলিপকে লন্ডনে সাংবাদিকরা তাকে নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তার পরিবারকে বাংলাদেশি পুলিশ হুমকি দিয়েছিল।
তখন শ্যাডো কেবিনেটের সদস্য না থাকা টিউলিপ চ্যানেল ৪-এর সাংবাদিকদের কাছে মীর আহমদ বিন কাসেম সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন হন। কাসেম ২০১৬ সালে বিরোধী রাজনীতিকদের আইনজীবী দলের সদস্য হিসেবে আটক হন। কাসেমের মা টিউলিপকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং তাকে বিষয়টি খোঁজ নিতে বলেছিলেন, কারণ তিনি বাংলাদেশে টিউলিপের শান্তি প্রচারের কথা শুনেছেন। টিউলিপ জানান, তিনি এক ফরেন অফিস মন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান। ওই মন্ত্রী বলেছিলেন, তারা ঢাকা হাইকমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করবেন।
সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রচারের কয়েক ঘণ্টা আগে, বাংলাদেশি পুলিশ বাহিনীর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন কাসেমের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় তার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়।
হাসিনার পতনের পর মুক্তি পাওয়া কাসেম দ্য টাইমসকে বলেন, তার পরিবার আট বছর ধরে জানতেন না তিনি জীবিত নাকি মৃত। তিনি বলেন, "এটা ছিল পরিকল্পিত অত্যাচার এবং মৃত্যুর থেকেও খারাপ অভিজ্ঞতা।"
তিনি বলেন, টিউলিপ যদি পদে থাকেন, তবে এটি ব্রিটেন এবং ব্রিটিশ এমপিদের বৈশ্বিক ইমেজের জন্য ক্ষতিকর হবে। তিনি যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার, সমিতির স্বাধীনতা এবং বক্তব্যের স্বাধীনতার মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি এসবের পক্ষে না দাঁড়ানো হয়, তবে এটি যুক্তরাজ্যের অবস্থানকে দুর্বল করে তোলে।
টিউলিপের একজন মিত্র বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু জানতেন না এবং এতে জড়িত ছিলেন না।
টিউলিপের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই অভিযোগগুলোর জন্য কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি এবং টিউলিপ পুরোপুরি এই দাবিগুলো অস্বীকার করেছেন।