অন্য পোর্টালের সংবাদ চুরি করে চলা সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত: শফিকুল আলম
যেসব সংবাদমাধ্যম অন্য পোর্টালের সংবাদ চুরি করে চালায় সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, 'আমাদের কপিরাইট ইনফোর্সমেন্ট খুবই জরুরি। একজন সংবাদিক দুই মাস খেটে একটা নিউজ করেন, সেটা অন্য কোনো নিউজ পোর্টাল এক সেকেন্ডে কপি করে ফেলল। একজন ফটোগ্রাফার পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটা ছবি তুললেন, সেটা একটা বড় পত্রিকায় অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করে ফেলল। যেসব সংবাদমাধ্যম অন্যান্য পত্রপত্রিকা থেকে সংবাদ চুরি করে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।'
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই'- এর ব্যানারে 'গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব: নাগরিক ভাবনা'- শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় শফিকুল আলম বলেন, 'প্রেস কাউন্সিল অনেক কথা বলে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি অনেক কথা বলে, নোয়াব অনেক কথা বলে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত যারা এরকম চুরি করছে, তাদের বন্ধ করে দেওয়া। এই চুরি করার কারণে আপনার আমার বেতনটা কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশে কপিরাইট ইনফোর্সমেন্ট নেই বলে সবাই চুরি করে।'
তিনি আরও বলেন, 'জার্নালিজম করতে হলে আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। আপনাকে সাংবাদিকদের বেতন দিতে হবে। জার্নালিস্টদের রক্ত এত সহজ না। জার্নালিস্টদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সত্যিকার অর্থে এই বিষয়টি দেখা উচিত।'
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, 'আমাদের গার্মেন্টস সেন্টারে কর্মীরা যদি তাদের বেতনের জন্য এত বড় ফাইট করতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না। আপনি যে সংবাদ মাধ্যমই চালান না কেন, আপনাকে ভালো সাংবাদিক রাখতে হবে এবং মিনিমাম মজুরি দিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'গণমাধ্যমের সংস্কার আমরা করতে যাচ্ছি, কারণ গণমাধ্যমকে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার ব্যবহার করেছে। ডিজেআইএফ'র একটা ফোন কল, এনএসআই'র একটা ফোন কল, ডিজি'র একটা ফোন কল, মিনিস্টারের একটা ফোন কল এনাফ ছিল। আইসিটি নামে যেটা ছিল সেটা ন্যায়বিচার ছিল না। সেটা ভয়াবহ অন্যায় বিচার ছিল।'
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে থাকা নসরুল হামিদ মিলনায়তন নসরুল হামিদ তার নিজস্ব টাকায় করেছেন কি-না সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এই নামটি রাখা উচিত কিনা তা রিপোর্টার ইউনিটিকে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্য দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আকবর হোসেন বলেন, '৫ আগস্টের পরে আমরা অনেক পরিবর্তনের কথা বলছি। আমরা যদি মালিকানার জায়গায় গার্মেন্টস সেক্টরে ন্যূনতম মজুরির কথা বলছি। কিন্তু কয়টা মিডিয়ায় এই মানদণ্ড আছে? ওয়েজবোর্ড যেটা আছে সেটা শুধু পত্রিকার জন্য। আমরা যদি একটা মানদণ্ড ঠিক করতে পারি, আপনি যদি এটা ঠিক করতে পারেন, তাহলে আপনি পত্রিকা রান করতে পারবেন, নাহলে পারবেন না।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেকে আছে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ইনহাউজে তার রিপোর্টারকে কেয়ারই করে না। একটা রিপোর্টারের কতটা খাটুনি, সপ্তাহে মানসম্পন্ন রিপোর্ট করতে কত খাটুনি যায়, সেটা তারা কেয়ারই করে না।'
আকবর হোসেন বলেন, 'মিডিয়া হাউজগুলোর একাউন্টেবিলিটি থাকা দরকার। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কোনো কিছু করা পরিহার করতে হবে। মিডিয়া হাউজে থেকে আপনি অ্যক্টিভিজম করবেন আর বলবেন স্বাধীনতা নাই এটা করা যাবে না। আপনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে অ্যক্টিভিজম করবেন, সমালোচনা করবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।'
আলোচনা সভা থেকে ১৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, সরকারি নিয়ন্ত্রণ রোধে স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন, মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সাংবাদিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাকরির নিরাপত্তা, বেতন কাঠামোর সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংস্কার, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন, বাজেটে গণমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রাখা, গণমাধ্যম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজিকরণ, আঞ্চলিক ও বিকল্প গণমাধ্যমের উন্নয়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই- এর মুখপাত্র আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির। সংগঠনটির মুখপাত্র প্লাবন তারিখের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আইনজীবী মোল্লা ফারুক এহসান এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মাহবুব আলম প্রমুখ।