আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভরাডুবি: সিলেট মহানগর বিএনপির দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি আইনজীবী প্যানেলের ভরাডুবি নিয়ে দলটিতে আলোচনা-সমালোচনা থামছেই না। এবার এই নির্বাচনে বিতর্কিত অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ আহমদ চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত এক পত্রে এই দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে কয়েস লোদী ও ইমদাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়- 'সম্প্রতি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সিলেট মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এমন দায়িত্বহীনতার কারণে কেন আপনাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার যথাযথ কারণ দর্শীয়ে একটি লিখিত জবাব আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দলের নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।'
গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৬টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২টিতে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা জয় পেয়েছেন। এছাড়া বিএনপিপন্থি ছয়জন ও জামায়াতপন্থী পাঁচজন জয় পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে একজন জাসদপন্থী এবং দুজনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য নুরুল হককে ভেতরে-ভেতরে সমর্থন দেয়। তবে একই পদে এখানে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনও প্রার্থী হন। তাকে নির্বাচন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এ অবস্থায় কিছুদিন প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত নুরুল হক প্রার্থী হননি। মূলত এরপর থেকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এর প্রভাব পড়ে নির্বাচনে।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি পদেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না। এতে বিএনপি ঘরানার প্রার্থীদের দলটির সমর্থক অনেক ভোটার ভোট দেননি। এ অবস্থায় বিএনপিপন্থি বেশিরভাগ আইনজীবী নির্বাচনে পরাজিত হন। তবে আওয়ামী লীগের চলমান দুঃসময়েও দলটির সমর্থক অনেক আইনজীবী জয় পেয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন।
এই ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।
এ ছাড়া ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে রোববার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি। ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব কায়সার কামালের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। তদন্ত কমিটিকে সরেজমিন অনুসন্ধান ও ফোরামের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।