যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ: নিজস্ব অর্থায়নে স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালু রাখার পরামর্শ
বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব এরইমধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে পড়তে শুরু করেছে। ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত হয়ে গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতও দিয়েছে।
এর প্রভাবে গত সপ্তাহে, আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক হাজারের বেশি কর্মীকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন মাস পর মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে স্থগিত থাকা কিছু কিছু প্রকল্প হয়তো চালু হবে, তবে স্বাস্থ্যখাতের সব প্রকল্প চালু নাও হতে পারে। তাই এখনি সরকারের উচিত হবে প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে নিজস্ব অর্থায়নে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউ-এর এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যে তহবিল বন্ধ হয়েছে, তা প্রতিস্থাপনের জন্য অন্য কৌশল নিয়ে কাজ করছে সরকার, তবে কিছু জিনিসে কাটছাঁট হতে পারে।
গত ২০ জানুয়ারি, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রায় সব বিদ্যমান বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত এবং নতুন সহায়তা প্রদান বন্ধ করেছে বলে জানানো হয়। এ সংক্রান্ত একটি অভ্যন্তরীণ মেমো কর্মকর্তাদের এবং বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন দূতাবাসগুলোতেও পাঠানো হয়েছে। মেমোটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর জারি করা হয়। ওই আদেশে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির কার্যকারিতা ও সামঞ্জস্য পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত ৯০ দিনের জন্য সব বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত থাকবে। তবে এ আদেশের পরিসর তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি, ইউএসএআইডি বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বাস্তবায়নাধীন সব চুক্তি, কার্যাদেশ, মঞ্জুরি, সহযোগিতামূলক চুক্তি বা অন্যান্য প্রকল্পের সব ধরনের কর্মসূচি বন্ধ বা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ইউএসএইড।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল টিবিএসকে বলেন, "এরইমধ্যে আইসিডিডিআর'বি কর্মী ছাটাই করেছে, বেশ কিছু গবেষণা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা একটা বড় প্রভাব। এছাড়া গত দুই-তিন মাস আগে যেসব প্রকল্প শুরু হয়েছে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আরবান হেলথ নিয়ে একটি প্রকল্প ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। পুষ্টি সংক্রান্ত দুটি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। টিউবারকোলোসিসের (যক্ষ্মা) দুটি প্রজেক্ট আছে, সেগুলো চালানো হবে কি না এখনও জানা যায়নি।"
"এসব প্রকল্প বন্ধ হওয়ার ফলে একদিকে এখানে কাজ করা লোকজন চাকরি হারাবেন, অন্যদিকে এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী সাধারণ মানুষও উপকার পাবেন না আর।"
"এখনো যেহেতু স্পস্ট করে বলেনি একেবারে এসব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তাই আশা করা যাচ্ছে সব বন্ধ হবেনা। তবে একেবারে বরাদ্দ বন্ধ হলে বাংলাদেশের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম—বিশেষ করে হেলথ সেক্টরের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে," যোগ করেন তিনি।
এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, "সরকারের এখন উচিত ইউএস ফান্ডেড প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে এসবের প্রভাব কেমন হবে তা মূল্যায়ন করে দেখা। পরে গুরুত্ব বিবেচনায় নিজে বিনিয়োগ করতে হবে।"
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়া শুরু করেছে আমাদের দেশে। যারা মার্কিন অর্থায়নের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা পায়, তাদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া কিছু অরগানাইজেশন আছে, যাদের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করা হয়, তাদেরও অসুবিধা হচ্ছে। অনেক অরগানাইজেশন বন্ধ হয়ে যাবে ৯০ দিন পরে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "তিনমাস পরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে কিছু কিছু কার্যক্রম যদি শুরুও হয়, স্বাস্থ্যখাতের রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ, জন্ম নিয়ন্ত্রণের মতো কিছু কিছু কার্যক্রমে অর্থায়ন একেবারেই হয়তো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এটা আশঙ্কাজনক।"
"আমাদের সরকারের উচিত এখন এগুলোতে নজরদারি রাখা। যেহেতু এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যখাতের জন্য প্রয়োজনীয়। সেজন্য কিছু বিকল্প চিন্তা যদি আগে থেকেই করে রাখা যায়, সেটা ভালো হবে। এটা মাথায় রেখে নিজস্ব অর্থায়ন ও কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি রাখা উচিত বলে মনে হয় আমার," বলেন তিনি।
শনিবার সকালে বিএসএমইউতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, "মার্কিন অর্থায়ন বন্ধের কারণে একটি প্রতিষ্ঠান তার ১,২০০-১,৩০০ কর্মীকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সম্পর্ক আছে সরকারের অনেকগুলো কর্মকাণ্ডের সাথে।"
"আমরা অবশ্যই যেগুলোকে রিপ্লেস করার জন্য দ্রুত কর্মকৌশল নির্ধারণের চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও আমাদের কিছু অংশ কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হতে পারে," যোগ করেন তিনি।