ভিসা জটিলতায় বিপাকে দুবাই গালফ ফেয়ারে স্টল নেওয়া বাংলাদেশি ৪১ প্রতিষ্ঠান
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/screenshot_2025-02-04_at_2.56.23_pm.png)
দুবাইতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুড এক্সপো 'গালফ ফুড ২০২৫' এ স্টল বরাদ্দ নিলেও ভিসা জটিলতায় আটকে আছে বাংলাদেশি ৪১টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ।
এক্সপো শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনও ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেনি অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পোর্টাল উন্মুক্ত না হওয়ায় নানান মাধ্যমে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।
গত বছরের মেলায় বাংলাদেশি ৩৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে ২৫০ কোটি টাকার বেশি পণ্য রপ্তানির অর্ডার পেয়েছিল। বাংলাদেশি স্টল ঘুরেছেন ১০ হাজারের বেশি বৈশ্বিক কাস্টমার।
ভিসা জটিলতায় এবারের এক্সপোতে অংশ নিতে না পারলে তা দেশের জন্য বড় ক্ষতি হবে মনে করছেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক।
তিনি বলেন, "প্রাণ-আরএফএফ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, অলিম্পিক, কাজী, কিশোয়ান, বনফুল, আকিজ, বম্বে ফুডস, টিকে, ইফাদ, এসিআই, ড্যানিসসহ মোট ৪১টি প্রতিষ্ঠান স্টল নিয়েছে। প্রতি স্টলের জন্য কোম্পানিগুলো রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) ৭,২৫,০০০ টাকা করে পরিশোধ করেছে। ওখানে স্টল স্থাপনের কাজও চলছে। প্রতি কোম্পানি থেকে দুজন করে প্রতিনিধির জন্য ভিসার আবেদন করতে গিয়ে আটকে গিয়েছি।"
"ভিসা আবেদন করার জন্য বাংলাদেশে ইপিবি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, দুবাইয়ের কমার্সিয়াল কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে পোর্টাল বন্ধ থাকার কারণে আমরা কোনো মাধ্যমেই পারছি না। ইপিবিও নানান মাধ্যমে চেষ্টা করছে। এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন," যোগ করেন ইকতাদুল।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা রেস্টিকশন (অবরোধ) রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বেসরকারি হিসেবে প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি এখানে বসবাস করেন। সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে সমাবেশ করায় ৩৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে সাজা দেয় দেশটি। তখনই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা আবদনের পোর্টাল বন্ধ করে দেয় আরব আমিরাত। ফলে ২৪ জুলাই থেকে সাধারণদের জন্য ভিসা আবেদন বন্ধ রয়েছে দেশটিতে।
তবে সাধারণদের জন্য ভিসা আবেদন বন্ধ থাকলেও গালফ ফুড ফেয়ারে অংশগ্রহণকারীরা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সুযোগ পাবেন বলে আশা করছে সরকার। এ বিবেচনায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে চেষ্টা করছে ইপিবি।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, "গালফ ফুড একটি ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্লোবালি পরিচয় করাতে আমরা ৫০ শতাংশ সাবসিডি দিয়ে স্টল বরাদ্দ নিই। কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ৭,২৫,০০০ টাকা নিয়ে সমপরিমাণ সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর আমাদের কোম্পানিগুলো দারুণ পারফরমেন্স করেছে। ব্র্যান্ডিংয়ের এমন সুযোগ আমরা মিস করতে চাই না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ঢাকায় আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। এক্সবিউশনের আয়োজক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও কথা বলেছি। আরব আমিরাতের একটি কোম্পানির মাধ্যমে ভিসা আবেদনের ব্যবস্থা করেছি। সম্ভব্য সব সুযোগ এক্সপ্লোর করে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।"
"এরপরও না হলে এটি হবে আমাদের জন্য কষ্টের," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, "বাংলাদেশিদের সামগ্রিক ভিসা বিষয়ে আমি আমাদের ওয়েস্ট এশিয়া উইংয়ের ডিজি'র (মহাপরিচালক) সাথে কথা বলেছিলাম। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে দুবাই ভিসা ইস্যু করে।"
সারাবিশ্বের ৫ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ১৩০টি দেশ এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিবছর ১.৫ লাখ ব্যবসায়ী-আমদানিকারক মেলায় আসেন। যদিও এবারের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
খাদ্যপণ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএরএল গ্রুপ। এই গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, "নতুন করে পণ্যের বাজার ধরার জন্য এই মেলা খুবই ফলপ্রসূ। বাংলাদেশ এই মেলায় অংশ নিয়ে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে।"
"গত বছর প্রাণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্যাভিলিয়ন দিয়েছে। প্রায় শত কোটি টাকার অর্ডার পাওয়া গেছে। বিপুল সংখ্যক বিদেশি ক্রেতা আমাদের স্টলে এসে বাংলাদেশি পণ্য সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। আমরা এবারও বড় আকারে প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে ভিসা জটিলতা দ্রুত না কাটলে সবাই বিপাকে পড়বো," যোগ করেন তিনি।