মহামারির দুই বছর পরও পরবর্তী মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ: গবেষণা
কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় বছর পার করছে বিশ্ব। এই রোগ কেড়ে নিয়েছে অর্ধ-কোটির বেশি প্রাণ। বিশ্বমারি কত বিপজ্জনক তা এতদিনে পৃথিবীর হারে হারে উপলদ্ধি করারই কথা। তবুও বাকি বিশ্বের মতো ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় এখনও প্রস্তুতহীন বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার (৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
২০২১ সালের গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি ইনডেক্স নামক প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ এবং ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি।
গবেষকরা আগামীর মহামারির মোকাবিলায় সকল দেশেই প্রস্তুতির অভাব লক্ষ্য করেছেন। নেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জরুরি অবস্থা মোকাবিলার তোড়জোড়। তাই যদি কোভিডের চেয়েও মারাত্মক সংক্রামক রোগ দেখা দেয়, তখন বিপর্যয় এড়ানোর উপায় নেই। বেশিরভাগ দেশই ভবিষ্যত মহামারি এবং অতিমারির পাশাপাশি এমনকি ছোটখাট রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুত নয়।
গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি ইনডেক্স (জিএইচএক্স) এর চলতি বছরের সংস্করণে মহামারি মোকাবিলার সক্ষমতার বিচারে ১৯৫টি দেশের মধ্যে ৯৫তম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে ২০১৯ সালে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। সেখানে ১৯৫ দেশের মধ্যে ১১৫তম হয়েছিল বাংলাদেশ।
প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া মাত্রই তা প্রতিরোধকে সক্ষমতার প্রথম ভিত্তি বিবেচনা করেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে ২০১৯ সালে মোট ১০০'র মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৩.৭। যা ছিল জিএইচএক্স সারণীর মধ্যে সবচেয়ে কম স্কোর।
তবে এ বছর রোগ 'শনাক্তকরণ ও রিপোর্টিং' মানদণ্ডে সবচেয়ে বেশি বা ৪৩.৮ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে এই স্কোর ছিল ৩৯.৬। এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৯তম। আর গড় বৈশ্বিক স্কোর হলো ৩২.৩।
গত দুই বছরে কেবল টিকাকরণ, পরীক্ষাগার ব্যবস্থার শক্তি ও মান, জরুরি অবস্থা মোকাবিলার প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা, প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, জরুরি প্রতিক্রিয়া কার্যক্রম, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং সামাজিক সেবা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো উপ-সূচকেই উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।
সবচেয়ে কম স্কোর পেয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল রেজিসট্যান্স ক্যাটাগরিতে। কোনো ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ও পরজীবী যখন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে ওষুধের কার্যকারিতে কমায় এবং সংক্রমণ নিরাময়কে আরো কঠিন করে তোলে; তখনই বাড়ে রোগটি বিস্তারের ঝুঁকি, এতে মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঘটনা। এমন সংক্রমণ প্রতিহত করার সূচকই হলো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল রেজিসট্যান্স।
কিছু উপসূচকে ১০০ এর ভেতর শূন্য স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। যারমধ্যে রয়েছে-বায়োসিকিউরিটি, বায়োসেফটি, জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, সংক্রমণ প্রতিরোধ চর্চা ।
এছাড়া, সংক্রমণের কেস ভিত্তিক অনুসন্ধান, বাণিজ্য ও ভ্রমণ বিধিনিষেধ এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো মানদণ্ডেও বাংলাদেশের স্কোর সন্তোষজনক নয়।
এসব কিছু সত্ত্বেও গত ৩০ নভেম্বর নাগাদ ব্লুমবার্গের কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাঙ্কিংয়ে ৬৬.২ স্কোর নিয়ে ১৭তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। এপর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ১৫ লাখ ও ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
২০২১ সালের প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার গড় স্কোর ২৬.৬, যা পাঁচটি সাড়ির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
সকল মানদণ্ডে ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কোর দেওয়া হয়, এতে ১০০ স্কোর পাওয়ার অর্থ সর্বোত্তম জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি।
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত, আর পুরো বিশ্বে হয়েছে ৬৬তম। প্রতিবেশী দেশটির মোট স্কোর ৪২.৮। ২০১৯ সালের পর যা শূন্য দশমিক ৮ পয়েন্ট কমেছে। একইসময়ে, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের স্কোর ১-১.২ পয়েন্ট বেড়েছে।
প্রতিবেদনটি জানিয়েছে, উচ্চ আয়ের দেশসহ অধিকাংশ দেশ প্রাদুর্ভাব বা মহামারি মোকাবিলা ও প্রস্তুতি শক্তিশালীকরণে নিবেদিতভাবে আর্থিক বিনিয়োগ করেনি। একইসঙ্গে প্রাদুর্ভাব শনাক্ত ও প্রতিক্রিয়ায় একটি টেকসই, সক্ষম এবং সর্বসাধারণের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা প্রণয়নেও গবেষকরা সামান্য উন্নতি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
করোনায় উচ্চ মৃত্যু ও শনাক্ত হার থাকার পরও ৭৫.৯ স্কোর নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরেই যথাক্রমে আছে- অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, কানাডা, থাইল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও যুক্তরাজ্য।
গবেষকরা প্রতিবেদনে লিখেছেন, 'জিএইচএক্স ইনডেক্স একটি দেশের মহামারি প্রতিরোধ সক্ষমতা ও প্রস্তুতিতে নিয়োজিত সম্পদ শনাক্ত করতে পারলেও; গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে সংকটকালে একটি দেশ কীভাবে এসব সম্পদের ব্যবহার করবে, সেব্যাপারে আভাস দিতে পারে না।'
২০২১ সালে জিএইচএক্স সারণীর গড় স্কোর ৩৮.৯। কোনো দেশই ৮০ স্কোর অর্জন করে সর্বোচ্চ সাড়িতে উঠে আসতে পারেনি।