নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ দিবে বিএফএসএ, জাইকা
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে দেশব্যাপী খাদ্য শৃঙ্খলে যারা যুক্ত আছেন, তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সার্ভিসল্যান্স কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা, ডাটাবেজ প্রস্তুত, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও কল সেন্টার স্থাপন করবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এবং জাইকা। এছাড়া দেশব্যাপী মোবাইল ল্যাবরেটরি চালুর মাধ্যমে খাদ্যের তাৎক্ষণিক পরীক্ষা সুবিধা সম্প্রসারণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
'বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ' (এসটিআইআরসি) প্রকল্পের মাধ্যমে জাইকার সমন্বয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে এ বছরের ১লা জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যার মেয়াদকাল ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের কনভেনশন হলে আয়োজিত 'বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রকল্প অবহিতকরণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা অবমুক্তকরণ' শীর্ষক কর্মশালায় এ বিষয়ে জানানো হয়।
প্রকল্প সম্পর্কে এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প পরিচালক মনজুর মোর্শেদ আহমেদ এবং জাইকা টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্টের দলনেতা আতসুশি কোয়ামা।
তারা বলেন, সারা দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫ লাখ খাদ্য ব্যবসায়ীর মধ্য থেকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৫৭ হাজার জনকে সম্পৃক্ত করা হবে। সারা দেশে সরাসরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১৬৪০ জন, কর্মশালার মাধ্যমে ৮ হাজার জন এবং বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে দেড় লাখ খাদ্য উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী, কর্মচারী, হোটেল ব্যবসায়ী, ফল বিক্রেতাসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, "নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সুস্থ সবল জাতি গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এককভাবে কাজ করলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব না।"
বিএসটিআই একা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের বিষয়ে কাজ করতে পারছে না বলেই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এ প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় দেশের সকল প্রান্তের মানুষ নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে জানতে পারবে এবং অনেকেই প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে। কাউকে শাস্তি দিয়ে নয়, আমরা চাই স্বভাবতই মানুষ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করুক কিন্তু এরপরেও যদি কেউ এ কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তাহলে তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।"
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পে সহায়তা প্রদানের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও জাইকাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, "ভোজনরসিক বাঙ্গালির স্বাস্থ্য ও জীবন সুরক্ষায় উৎপাদন থেকে ভোক্তার প্লেট পর্যন্ত নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য ও সঠিকভাবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে কাজ করে যেতে হবে। এবং এ প্রকল্প নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাজকে আরো বেগবান করবে।"
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, "নিরাপদ খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ, পরিদর্শন ও নজরদারি, খাদ্য পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে।"
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, জাইকা কর্তৃক গৃহীত প্রকল্প বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জাপানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে অগ্রযাত্রার সঙ্গী হয়ে জাপান কাজ করে যাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
জানা যায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ দূর করার লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যোপকরণ তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ সুবিধার জন্য ৮টি বিভাগে একটি করে মোবাইল ল্যাবরেটরি চালু করবে। এছাড়া ভেজাল খাদ্য সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও সংশয়ের উদ্রেক নিবারণে সঠিক তথ্য ও অনুসন্ধানের জন্য অনলাইন কল সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ, মতামত ও করণীয় সম্পর্কে জানতে পারবে যে কেউ। এর মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞগণ সমস্যা সমাধানে প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসের প্রধান বিজ্ঞানী ড. মো. লতিফুল বারি।
তিনি বাংলাদেশে বহাল খাদ্য নিরাপত্তার নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে উত্তরণের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন কোডেক্স চেয়ারম্যান এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ডেভ; জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়া; বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন প্রমুখ।