আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশনে বসবেন নির্মলেন্দু গুণ
সম্প্রতি বরিশাল জেলায় কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় পঞ্চম হওয়া আসপিয়াকে 'ভূমিহীন' হওয়ায় নিয়োগ না দেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্বাধীনতার এতো বছর পর এসেও দেশে কেন এ ধরনের একটি আইন বলবৎ আছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সম্পর্কীয় এক পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। তার সেই কমেন্ট পোস্ট আকারে শেয়ার করছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন, 'ভূমিহীন হলে পুলিশের চাকরি করা যাবে না—এরকম একটা আইন আছে, সেটাই তো জানতাম না। মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও ভূমিহীন বলে বরিশালের আসপিয়া চাকরি পাবে না, এটা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না। এই আইন বাতিল কিংবা সংশোধন করে তাকে চাকরি দেওয়া হোক। নইলে আমি অনশনে বসব।'
নির্মলেন্দু গুণের এ মন্তব্যের পর অনেকেই তার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন, অনেকে তার সঙ্গে অনশনে বসার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের। তিনি বলেন, "এমন একটি আইন থাকাটাই তো নিন্দনীয়। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য আর সীমাবদ্ধতা যে এ ধরনের একটি বৈষম্যমূলক আইন আছে দেশে তা-ই আমরা জানতাম না।
"এক আসপিয়ার ঘটনা সামনে এসেছে দেখে আমরা এ বৈষম্যের কথা জানতে পারলাম। এর আগে আসপিয়ার মতো আরও কতো মানুষ এভাবে বঞ্চিত হয়েছে তা আমরা জানতেই পারিনি,"
অবিলম্বে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এ আইন বাতিলের দাবি তোলেন তিনি। "আইন যেহেতু আছে, এক্ষেত্রে হয়তো পুলিশের কিছু করার নেই, এ সমস্যা তো রাষ্ট্রের। সংসদ অধিবেশনে এ প্রসঙ্গ তুলে আইনটি বাতিল করতে হবে।"
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। "নির্বাহী আদেশে কতো খুনী মাফ পাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।"
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দপ্তর। অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।
২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও তিনি উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আসপিয়া।
চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে 'ভূমিহীন' উল্লেখ করা হয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগে ভূমিহীন হওয়ায় (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।