কক্সবাজারে পর্যটক নারীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ৩ যুবক শনাক্ত
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/12/23/gridart_20211223_213002865.jpg)
কক্সবাজারে নারী পর্যটককে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র্যাব। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন (৩৩) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।
শনাক্তরা হলেন কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার মৃত আব্দুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শফিক ওরফে গুন্ডা শফির ছেলে ইসরাফিল হুদা জয়। তবে র্যাব সিসিটিভির তৃতীয়জনের পরিচয় জানাতে না পারলেও অপরজন আবুল কাসেমের ছেলে মেহেদী হাসান বাবু ওরফে গুন্ডা বাবু বলে উল্লেখ করেন স্থানীয়রা।
ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন প্রধান অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার জয়, বাবু ও আটক হোটেলের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। বাকি দুজন অজ্ঞাত। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে সদর মডেল থানায় এ ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/12/24/saddamashiqcx.jpg)
এর আগে, বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে এক পর্যটক নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে শহরের লাইট হাউজ এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেল থেকে একই রাত দেড়টার দিকে তাকে উদ্ধার করে র্যাব-১৫।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আশিক সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনই কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী। তারা তার ছত্রছায়ায় ইয়াবা কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে সাদ্দামের সাথে আশিক ও অন্যদের বিভিন্ন সময় তোলা কিছু ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
তবে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকে আমার কাছে এসে ছবি তুলেছেন। এরাও তাদের মতো। ছবি থাকলে কি ছাত্রলীগ হয়?' অভিযুক্তরা কেউ ছাত্রলীগের পদে নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2021/12/24/ashiq-saddam-pic.jpg)
ধর্ষণের শিকার ওই নারী গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন তারা। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে গিয়ে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথাকাটাকাটি হয়। সন্ধ্যায় পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায়।
আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় তিন যুবক তাকে তুলে নিয়ে যায় পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে। সেখানে সংঘবদ্ধভাবে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।
ওই নারী আরও জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন তিনি। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। আরেকজনের সহযোগিতায় কল দেন র্যাবকে। র্যাব অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, বারবার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি। বেড়াতে এসেছিলাম বেতন পেয়েছি সেই খুশিতে। এখন স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী পরিচয় দিয়ে আশিক, বাবু জয়া, রেশাদ, হাসান, আমিনসহ আরো অনেকে হোটেল মোটেল জোন এলাকায় মাদক, ছিনতাই, দখলসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই না। বুধবারও এক নারীকে নিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে আশিকসহ অন্যান্যরা।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, 'খবর পেয়ে আমরা হোটেল থেকে গৃহবধূকে উদ্ধারের পর স্বামী-সন্তানকে উদ্ধার করি। ইতোমধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হোটেল জিয়া গেস্টইনের ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।'
এদিকে, স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় জাতীয় সেবা ৯৯৯ ফোন করে সহযোগিতা চাইলে তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি পুলিশ এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, 'বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার ভোর অবধি ৯৯৯ থেকে কোনো ফোন কক্সবাজার সদর থানায় সংযুক্ত করা হয়নি।'
তিনি বলেন, 'নারী পর্যটককে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।'
পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারীকে উদ্ধারে এগিয়ে না আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ভিকটিমের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে দায়িত্বে অবেহলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'