র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ওয়াশিংটনকে ঢাকার অনুরোধ
বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এ খবর।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন।
আজ রোববার (২ জানুয়ারি) সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মোমেন সম্প্রতি ব্লিঙ্কেনকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চিঠিতে তিনি লিখেছেন, "আমাদের দুই দেশের মধ্যে ৫০ বছরের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের আলোচনার সুযোগ রয়েছে।"
মন্ত্রী বলেন, "র্যাব একটি বিশ্বস্ত সংস্থা। র্যাবের কারণে দেশের ভিতরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমন কমেছে, তেমনি মাদক সংক্রান্ত মামলা এবং মানব পাচারও হ্রাস পেয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে আমরা বিস্মিত। আমরা মনে করি, এই অভিযোগ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।"
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, "আপনারা অভিযোগ করছেন, গত ১০ বছরে দেশে ৬০০ গুমের ঘটনা ঘটেছে, যার পেছনে র্যাব দায়ী। আপনার দেশে প্রতিবছর এক হাজার লোককে হত্যা করা হয়। সেসব হত্যাকাণ্ডকে কেউ 'গুম' বলে না, সেগুলোকে গণ্য করা হয় 'দায়িত্বের মধ্যে'। কিন্তু আমাদের দেশে যখন এরকম কিছু ঘটে, তখন সংবাদপত্রগুলো একে 'বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' হিসেবে গণ্য করে।"
"তারা (মার্কিন) আমাদের দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেছে। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। যখন আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাকিস্তান সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। তাই আমাদের দেশের ভিত্তিই গণতন্ত্র," যোগ করেন তিনি।
এ চিঠির উত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া এসেছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বড়দিনের ছুটি পালিত হচ্ছে; তারা এরপরেই প্রতিক্রিয়া আশা করছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে 'মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমন-পীড়নের' অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, চীন এবং বাংলাদেশের ১৫ জন ব্যক্তিবর্গ এবং ১০টি সংস্থাকে তালিকাভুক্ত করেছে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারির (রাজস্ব বিভাগ) অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি)।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা মার্কিন ভিসা পাবেন না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তও হতে পারে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার পরপরই গত ১১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মন্তব্য করেন, এ পদক্ষেপের ফলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর।
র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, "আমি তা মনে করি না, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করছে।"
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "যেসব দেশ, সরকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে ভালো কাজ করেছে, তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। কোনো দেশ বা সরকার ভালো কাজ করলে সমস্যা দেখা দেয়, এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু করলে, ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে অনেকেই অনেক কিছু করে।"
তিনি তখন আরও জানান, এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি প্রচেষ্টা এবং আলোচনা চলছে।
এর আগে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকেও তলব করেছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।