অমর একুশে বইমেলা: চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি
ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা এক মাসের পরিবর্তে দুই সপ্তাহ করে ১৫ দিন পেছালেও সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার শুরু হতে যাচ্ছে।
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য 'কোভিডমুক্ত বাংলাদেশ চাই।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমি অংশে স্টলগুলোর চারপাশ পরিষ্কার করা হচ্ছে। বাঁশ, কাঠ, বোর্ড স্টলগুলোর নির্ধারিত কাঠামো তৈরি করছেন শ্রমিকরা। মূল অনুষ্ঠানস্থলের সাজানো-গোছানোর কাজও প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ভার্চুয়ালি মেলাটি উদ্বোধন করবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্টল নির্মাণের কাজ করছেন মিস্ত্রি আব্দুর রহমান। তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমাদের স্টল নির্মাণের প্রায় শেষ, আশা করি মেলা শুরুর অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা আগে আমাদের সকল কাজ শেষ করতে পারবো।"
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্তকর্তা প্রিন্স শীল টিবিএসকে বলেন, "আসলে ওমিক্রনের কারণে মেলার সময়সূচি, তারিখ ও শুরু হওয়া নিয়ে দোলাচল থাকার কারণে আমাদের মানসিক প্রস্তুতি কম ছিল, তবে এখন মোটামুটি সব কাজ সম্পন্ন করতে পারছি, আশা করি নির্দিষ্ট দিনে আমাদের শুরু করতে কোন সমস্যা হবে না।"
প্রতি বছর সাধারণত ডিসেম্বর মাসেই মেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করত বাংলা একাডেমি, জানুয়ারিতে দেয়া হতো বিভিন্ন প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দের কাজ। এবার সিডিউল অনুযায়ী শুরু করতে না পারায় লেখক-প্রকাশনীর অনেকেই প্রস্তুতির কারণে পিছিয়ে গেছেন বলে জানান কয়েকজন লেখক।
তেমনি একজন তরুণ লেখক আলমগীর গোলাপ। তিনি গত দু'টি মেলায় শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে পরপর দুইটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলেন। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এবার বইমেলায় তিনি তার বইটি প্রকাশ করতে পারেননি।
আলমগীর টিবিএসকে বলেন, "এবছর ওমিক্রনের কারণে বাংলা একাডেমি জানুয়ারি থেকে স্পষ্ট ঘোষণা না দেয়ায় আমি মনে করেছিলাম মেলা অনুষ্ঠিত হবে না, তাই আমার প্রবন্ধ প্রকাশের কাজটি শেষ করতে দেরি হয়ে যায়, নির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকায় আমাদের মাঝে কাজের উদ্দীপনা কমে গেছিল, প্রকাশক-লেখক সবারই একই অবস্থা, মনে হচ্ছে এবার মেলায় প্রকাশক-লেখকের উদ্দীপনা কিছুটা কম থাকবে, এছাড়াও স্কুল বন্ধ থাকায়ও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে।"
গত বছর বইমেলায় ৪৬৬ প্রকাশনী নতুন-পুরাতন বই নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে।
এবছর এর সংখ্যা কত জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা টিবিএসকে বলেন, "কত প্রকাশনী অংশগ্রহণ করছে এর সঠিক সংখ্যা জানা যাবে আগামীকাল বা পরশু। কারণ মেলার সময় ১৪ দিন হওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক প্রকাশনী টাকা জমা দিয়ে সে টাকা আবার ফেরত নিয়ে গেছে।"
বাংলা একাডেমি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এবারের বইমেলা আপাতত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বইমেলা প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শনার্থীরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত ৯টায় মেলার আলোকবাতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে মেলা সকাল ১১টা থেকে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাতে একই সময়ে শেষ হবে।"
এর আগে শুক্রবার সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অমর একুশে বইমেলা পরিদর্শন করার সময় বইপ্রেমীদের কোভিড-১৯ টিকা কার্ড বহন করতে এবং স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের আহ্বান জানান।
তিনি প্রকাশকদের আশ্বস্ত করেছেন যে কর্তৃপক্ষ তাদের লোকসান কমাতে স্টল ভাড়া ৫০% কমিয়ে দেবে।
শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, "কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমলে আমরা মেলার মেয়াদও বাড়াব।"
এবার সাড়ে সাত লাখ স্কয়ার ফুট জায়গাজুড়ে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। শিশুদের জন্য আলাদা মঞ্চের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য মঞ্চ রাখা হয়েছে।
তবে, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমিকে চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বইমেলা যেন ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পর্যন্ত করা হয়।
তাদের দাবি, গত বছর মেলায় প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং সারা বছর তাদের ব্যবসা ভালো ছিল না। মেলা ৩০ দিন হোক বা ১৪ দিন হোক স্টল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ একই। এবারও যদি ১৪ দিনের মেলা হয়, তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।