জুট অ্যালায়েন্সের ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে নতুন জীবন পেল বাংলাদেশ জুট মিলস
বন্ধ করে দেওয়ার প্রায় ২০ মাস পর নতুন জীবন পেয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ জুট মিলস। এই মৃত কারখানাটিকে নবজীবন দিতে এগিয়ে এসেছে দেশি-বিদেশি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেড।
জোটটির দুই প্রধান শেয়ারহোল্ডার বে গ্রুপ ও টিকে গ্রুপের সুবাদে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু হয়েছে মিলটিতে।
জুট অ্যালায়েন্সের অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে—হংকংভিত্তিক বেস্টলা লিমিটেড, তাইওয়ান শ্যু ম্যাটেরিয়ালস এবং বিএন ট্রেডিং।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই জোট কারখানাটিতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগ ধাপে ধাপে আরও বাড়বে।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে সরকারি জুট মিলগুলো বেসরকারিকরণে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) মিলটিকে বে গ্রুপের কাছে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। জুট অ্যালায়েন্সের মেজর শেয়ারহোল্ডার বে গ্রুপ। ইজারা থেকে বিজেএমসি প্রতি মাসে ৪০ লাখ টাকা পাবে।
লেদার, ফুটওয়্যার ও নির্মাণ খাতসহ কয়েকটি শিল্প খাতে ব্যবসা রয়েছে বে গ্রুপের। আরেক শেয়ারহোল্ডার টিকে গ্রুপের ভোজ্য তেল, ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, চামড়া ইত্যাদির ব্যবসা আছে।
ব্যাপক লোকসান ও অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়ের কারণে ২০২০ সালের জুলাইয়ে নরসিংদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ জুট মিলসসহ ২৫টি রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং অন্যান্য দেশে ক্রমবর্ধমান রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাটকলটিতে ফের উৎপাদন শুরু করেছে জুট অ্যালায়েন্স।
জোটটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিলটিতে শতভাগ রপ্তানিমুখী ফুড গ্রেডেড পাটের ব্যাগ উৎপাদন করা হবে।
প্রাচীন কারখানাটির যন্ত্রপাতির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এসব যন্ত্রপাতির ৫০ শতাংশ সংস্কার করা গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, ৩০০ কর্মী নিয়ে আংশিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। নতুন মেশিনারিজ আমদানির পর পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাবে কারখানাটি। তখন এখানে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেডের কো-অর্ডিনেটর হাসান আরিফ টিবিএসকে বলেন, 'বিদেশি ক্রেতার চাহিদা ও বর্হিবিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় মিলটি লিজ নিয়ে দ্রুততম সময়ে উৎপাদন শুরু করেছি। মিলটিতে শতভাগ রপ্তানিমুখী ফুড গ্রেড পাটের ব্যাগ উৎপাদন করা হবে।'
পরিকল্পনা অনুযায়ী, কারখানাটিতে প্রতিদিন ১০০ টন পণ্য উৎপাদন করা হবে। সে উদ্দেশ্যে নতুন ও আধুনিক মেশিনারিজ আমদানি করবে বে গ্রুপ।
হাসান আরিফ বলেন, গোটা বিশ্বে এখন পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা আছে। বিশেষ করে ফুড গ্রেড পাটের ব্যাগ দিয়ে প্যাকেজ না করলে পশ্চিমা বিশ্ব খাদ্যপণ্য নিতে চায় না।
ফুড গ্রেড পাটের ব্যাগ কেরোসিন বা মিনারেল অয়েল দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা ইয়ার্ন থেকে তৈরি হয় না, এ ব্যাগ তৈরি হয় ভেজিটেবল অয়েল, সয়াবিন তেল বা পাম তেল দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা ইয়ার্ন থেকে। একে ভেজিটেবল অয়েল ট্রিটেড পাটের ব্যাগও বলা হয়।
হাসান আরিফ জানান, তারা অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করবেন। তবে কী ধরনের পণ্য উৎপাদন করবেন, তা জানাননি তিনি।
সরকারের পাটকল বেসরকারিকরণের উদ্যোগ
২০২১ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রায়াত্ত ২৫টি পাটকলের মধ্যে ১৭টি পাটকলকে ৫ থেকে ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরবর্তীতে এ মেয়াদ আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। পরে স্থানীয়, বিদেশি ও পার্টনারশিপের কোম্পানিগুলো যেন নিলামে অংশ নিতে পারে, সেজন্য আন্তজার্তিক দরপত্র আহ্বান করে বিজেএমসি।
দুটি ভারতীয় ও একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠান ইজারা নেওয়ায় আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৪টি কলের বিপরীতে ৫৯টি প্রস্তাব জমা পড়ে।
খুলনার তিনটি কল কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়া পায়নি।
পাটকল বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া চলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে। এরপর ২০২০ সালে বন্ধ হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি পাটকল ইজারা দিতে পাঁচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে বিজেএমসি।
নির্বাচিত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হলো: ইউনিটেক্স গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, মিমু জুট মিল, বে গ্রুপে যৌথ উদ্যোগের জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক।
জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেড ও ইউনিটেক্স গ্রুপ যথাক্রমে নরসিংদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত কেএফডি জুট মিলস অধিগ্রহণের জন্য বিজেএমসির সাথে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ইজারার মেয়াদ ২০ বছর।
কেএফডি জুট মিলসের ইউনিট তিনটি—কর্ণফুলী জুট মিলস, ফুরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি এবং ডাইভারসিফাইড ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স।
বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান বিজেএমসির সঙ্গে এখনো ইজারা চুক্তি চূড়ান্ত করেনি।
ইউনিটেক্স গ্রুপকে রাষ্ট্রায়াত্ত এই মিলটি হস্তান্তর করেছে বিজেএমসি। ইউনিটেক্সও শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন করবে। বড় ধরনের বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কারখানাগুলো উৎপাদনে গেছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি টিবিএস।