মিনিমাম ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি টেলিকম অপারেটরদের
দেশে মোবাইল অপারেটরদের উপর বিদ্যমান দুই শতাংশ মিনিমাম ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এ খাতের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অফ বাংলাদেশ (এএমটিওবি বা অ্যামটব)।
সংগঠনটি মনে করছে, বিদ্যমান ব্যবস্থার কারণে লোকসান করা কোম্পানিকেও ট্যাক্স প্রদান করতে হচ্ছে, যা আয়কর আইনের মূলনীতির বিরোধী। ব্যবসায়ে লোকসান করার পরও সর্বনিম্ন কর প্রদান করার অর্থ হলো মূলধন হতে কর পরিশোধ করা। সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের এই শিল্পকে টিকে থাকার জন্য সর্বনিম্ন করহার প্রত্যাহার ও কমানোর দাবি জানানো হয়।
এছাড়া মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান কর্পোরেট করহার অন্যান্য খাতের তুলনায় অনেক বেশি উল্লেখ করেও তা কমানোর দাবি জানায় অ্যামটব।
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
অ্যামটবের পক্ষ থেকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল এসএম ফরহাদ।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় তামাক, বেভারেজ সহ লার্জ ট্যাক্সপেয়ার কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তারাও বক্তব্য দেন।
বর্তমানে যে কোন কোম্পানির আয় হোক বা না হোক, ০.৫% থেকে ২% হারে মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে দিতে হচ্ছে ২% হারে।
আয় না হলে আয়কর আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষের কথা জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) প্রস্তাবিত আয়কর আইনের উপর দেওয়া মতামতে আয় না হলে কোন ধরণের আয়কর কর্তন না করার উপর মতামত দিয়েছে।
এসএম ফরহাদ বলেন, আয়কর আইনে মূলনীতি হলো আয়কর আয়ের উপর দেওয়া হয়, বিক্রয় বা প্রাপ্তির উপর নয়। তিনি এই করহার প্রত্যাহার করা বা সর্বনিম্ন হারে অর্থাৎ ০.৫% হারে কর্তনের প্রস্তাব দেন।
আলোচনায় অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে মোবাইল ফোন কোম্পানির কর্পোরেট করহারের চিত্র তুলে ধরে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার বিদ্যমান ৪০% ও ৪৫% থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৩২% ও ২৫% করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এছাড়া কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) কার্যক্রমে ১০ শতাংশ ব্যয়কে রিবেট পাওয়ার জন্য অনুমোদিত ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করা, অনাবাসিক সরবরাহকারীদের জন্য নন-ডিডাকশন সার্টিফিকেট ব্যবস্থা বাতিল করা, টেলিকম সেবা ট্যাক্স ডিডাকশন এট সোর্স (টিডিএস) এর আওতামুক্ত রাখাসহ ৪টি এবং ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ে ৪টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
আলোচনায় বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম সিগারেটের নকল ট্যাক্স স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। এজন্য এ খাতের উপর মাত্রাতিরিক্ত ট্যক্সের বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ট্যাক্স ইনসিডেন্স বেশি হলে আলোচ্য উপায়ে ট্যাক্স ইভেশনের প্রবণতা বাড়ে। এটি টাকা নকল করার সমান। তিনি এ খাতের উপর কর না বাড়ানো কিংবা বাড়ালেও তা যাতে সহনীয় করা হয়, সে প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি তিনি এ খাতে স্থিতিশীলতা, তত্ত্বাবধান ও গভরনেন্সের উপর জোর দেন।
স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সিগারেট প্রস্তুতকারক সমিতির পক্ষ থেকেও এ খাতে নকল ব্যান্ডরোল হচ্ছে উল্লেখ করার পাশাপাশি এবার সিগারেটের দাম না বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোঃ হারুনুর রশীদ বেভারেজের উপর বিদ্যমান সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ১০ শতাংশ কমানো এবং পানির উপর থেকে শুল্ককর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন।
এছাড়া বেভারেজ খাতের অপর একজন প্রতিনিধি এ শিল্পে ব্যবহার হওয়া চিনির উপর শুল্ককর অন্যান্য আমদানিকারকদের ন্যায় সমান করার প্রস্তাব দেন।
আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশ্যে বলেন, "শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর কতটুকু শেয়ার অফ-লোড করা আছে, তার জন্য তারা কেমন সুবিধা নিতে পারছেন, আমরা পরীক্ষা করে দেখব।"
এছাড়া পানির উপর ট্যাক্সের বিষয়টিও তিনি পরীক্ষা করে দেখবেন বলে জানান।
তামাক খাত নিয়ে তিনি বলেন, "মানুষকে তামাক থেকে নিবৃত্ত করতে আমরা ট্যাক্স লোড বাড়িয়ে দিই। তবে অনেক সময় তাতে হয়ত কাজ হয় না। চোরাচালানের সুযোগ তৈরি হয়। এজন্য এ খাতে সতর্কতার সাথে এগোতে হয়, যাতে রেভিনিউ না পড়ে যায়, চোরাচালান না হয় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা হয়।"