স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ আমির হামজার নাম
তীব্র সমালোচনার মুখে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে আমির হামজার নাম বাদ দিয়েছে সরকার।
শুক্রবার তার নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশোধিত তালিকায় ৮ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।
গত ১৫ মার্চ এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এই তালিকা প্রকাশের পরই আমির হামজাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। কে তিনি, সাহিত্যে তার অবদানই বা কী—এসব নিয়ে সাহিত্যামোদীদের মধ্যে শুরু হয় জোর গুঞ্জন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই বলেছেন, তারা আগে কোনোদিন আমির হামজার নামও শোনেননি। দেশের শিল্পসংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের কাছেও আমির হামজা ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত।
জানা যায়, আমির হামজার জন্ম ১৯৩১ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার বরিশাট গ্রামে। তিনি ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবেশনের ধারায় প্রতিযোগিতামূলক আসরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংগীত রচনা ও পরিবেশন করতেন তত্ত্বগানের পাশাপাশি সমকালীন সময়, রাজনীতি, ইতিহাস-নির্ভর গান রচনা করেছেন। রচিত গানের সংকলন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে 'বাঘের থাবা', 'পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি', 'একুশের পাঁচালি' প্রভৃতি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
পরে জানা যায়, আমির হামজার মেজো ছেলে—বর্তমানে যিনি খুলনা জেলা পরিষদের সচিব—মো. আসাদুজ্জামান সরকার নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তার বাবার জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারের আবেদন করেন। আর ওই আবেদনে সুপারিশ করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তপন কান্তি ঘোষ জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার জন্য ১৬ জন সচিবের সমন্বয়ে গড়া প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সদস্যও।
এরই মধ্যে আরও জানা যায়, আমির হামজা ছিলেন যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামি। ১৯৭৮ সালে জমির ধান কাটা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন শাহাদাত ফকির। ওই হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন আমির হামজা। তাছাড়া শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
আমি হামজা যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন, তা স্বীকার করেছেন তার ছেলে মো. আসাদুজ্জামানও। আসাদুজ্জামান বলেন, 'বাবা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ঘটনাটি সত্য। তবে জীবদ্দশায় বাবাকে ভালো মানুষ হিসেবে জেনেছি। তিনি উদার মানুষ ছিলেন। মানুষকে ভালোবাসতেন। আমি তার সন্তান হিসেবে তার রচিত গান কবিতাগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। তারই স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্র। এটি সারা মাগুরার মানুষের জন্যে গৌরবের।'
সব মিলিয়ে আমির হামজাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান নিয়ে সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে। এরপর শুক্রবার পুরস্কার জয়ীদের সংশোধিত তালিকা থেকে বাদ পড়ল তার নাম।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পদক বাতিলের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার জন্য খুলনা বিভাগীয় সাবেক উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার এস এম রইজ উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে তুমুল বিতর্কের মুখে সাহিত্যজগতে একেবারেই অপরিচিত মুখ রইউজ উদ্দিনের পুরস্কারও বাতিল করা হয়।