যেখানে প্রতিদিন একত্রে ইফতার করছে পাঁচ হাজার মুসল্লি
ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এই রমজান মাসজুড়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায়। প্রতিদিন পাঁচ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করছেন সেখানে।
সাধক আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) এর জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা নলতা গ্রামে। ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতায় কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তখনকার সময় থেকে নলতার আশেপাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল চালু হয়। দিন দিন বাড়তে থাকে এর পরিধি। বর্তমানে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে প্রতিবছরই ১০ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয় প্রতিদিন। করোনায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়েছে ইফতার মাহফিল। তবে এবার ১০ হাজার নয়, করা হচ্ছে পাঁচ হাজার মানুষের ইফতার আয়োজন। পহেলা রমজান থেকে শুরু হওয়া ইফতার মাহফিল চলবে ৩০ রমজান পর্যন্ত।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, করোনার কারণে ১০ হাজার মানুষের আয়োজন কমিয়ে ৫ হাজার করা হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পূর্বের মত আবারও আয়োজন বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২০-২৫ জন বাবুর্চি ইফতার তৈরি বা রান্নার কাজ শুরু করেন, চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত।
রান্না শেষে পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিশাল ছাউনির নিচে যেখানে বসে ইফতার করেন একত্রে পাঁচ হাজার মানুষ। আসরের নামাজের পরপরই ইফতার দিয়ে শুরু হয় প্লেট সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট-বড় সব মিলিয়ে দুইশো যুবক স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করেন প্রতিদিন। প্রতিটি ইফতার প্লেট সাজানো হয় কলা, খেজুর, ফিরনি, ছোলা, চিড়াসহ নানা খাবার দিয়ে।
ইফতার তৈরিতে নিয়োজিত থাকা বাবুর্চি মো. জাকির হোসেন বলেন, "আমরা প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে রান্নার কাজ শুরু করি। শেষ হতে বেলা ৩টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে সিংগারা, ছোলা, ফিরনি তৈরি করি।"
স্বেচ্ছাসেবক জনি আহসান বলেন, "প্রতিবছর রমজান মাসে এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি, খুবই ভালো লাগে। আমরা রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকি। আমাদের সৌভাগ্য এতজন রোজাদারের খেদমত করতে পারা।"
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের আজীবন সদস্য প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান মহাসিন বলেন, ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) নলতায় মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইফতার করতে। প্রতিদিন আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় ইফতার তৈরিতে। পুরো টাকা আসে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দানের মাধ্যমে।
আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) পরিবারের বংশধর মাহামুদুল হাসান দোলন বলেন, "খান বাহাদুরের জীবদ্দশায় ১৯৩৫ সাল থেকে এখানে ইফতার চালু হয়। সেই বছরই তিনি নলতায় প্রতিষ্ঠা করেন আহছানিয়া মিশন। তবে তখন সেটা ছিল স্বল্প পরিসরে। এখন সেটার পরিধি বেড়েছে।"
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. এনামুল হক জানান, "আমরা প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করতাম। এখানে ৭-৮ হাজার মানুষ একসাথে বসে ইফতার করতো বাকি ইফতার প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন মসজিদে পাঠানো হতো। কিন্ত করোনার কারণে আমাদের ইফতার মাহফিল দুই বছর বন্ধ ছিল। আল্লাহর রহমতে আবার চালু করতে পেরেছি। করোনার কারণে স্বল্প পরিসরে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মানুষ ইফতার করছে এখানে। নলতার ইফতার মাহফিল দেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল। জানামতে, বাংলাদেশে আর কোথাও এমন বৃহত্তর ইফতার মাহফিল হয় না।"