মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতির উন্নতি করবে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেগা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।
তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষা চালিয়ে বাকি মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছি। শুধু ঋণের ভিত্তিতে নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের মাধ্যমেও অনেক মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।'
আজ বুধবার (১৩ এপ্রিল) ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন সরকার-প্রধান।
রাষ্ট্র পরিচালিত বিটিভি এবং বেতারের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি মিডিয়া আউটলেটে সম্প্রচারিত হয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশি ও বিদেশি ঋণ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তবে, আমরা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি যাতে ঋণগুলো বোঝা হয়ে না যায়'। আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।
২০২২ এবং ২০২৩ সালকে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, হিসেবে জানান, আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মাসেতু। এই সেতু জিডিপি-তে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বছরের শেষ নাগাদ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম রেল টানেল।
তিনি বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত মাসে পায়রায় ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামস্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে জিডিপি'র আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২,৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া পহেলা বৈশাখ পালনের সময় সকলের প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনা মহামারির কারণে আগের দুই বছর এ ধরনের উৎসব উপলক্ষে জনাসমাগমে বিধিনিষেধ থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবছর কোভিড-১৯ সংক্রমণ হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম থাকায় সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত স্থানে উৎসব আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
"তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাস একেবারে নির্মুল হয়নি। নতুনরূপে করোনাভাইরাস আবার যেকোন সময় যেকোন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।"
মহামারি মোকাবিলায় তার সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, "আমরা অবশ্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।"
পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্মে-বর্ণে বিভক্ত হলেও ঐতিহ্য ও কৃষ্টির জায়গায় সব বাঙালি এক এবং অভিন্ন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন এখনও স্ব-মহিমায় টিকে আছে।